ডেঙ্গু ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত, অন্যত্র নামমাত্র

স্যালাইন/ চমেক হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা আবুল হোসেন। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। গত ২ দিন ধরে মেডিসিন বিভাগের বারান্দায় চিকিৎসা চলছে তার। কিন্তু চিকিৎসার জন্যে হাসপাতাল থেকে একটি স্যালাইনও তিনি পাননি। বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। সেই স্যালাইনের প্যাকেটে ৮৭ টাকা লেখা থাকলেও ২৪০ টাকা দিয়েই কিনতে হয়েছে। হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডগুলোতে স্যালাইনের তীব্র সংকট বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা যায় কার্ডিয়াকের অষ্টম তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে প্রায় ৬৫ জনের মতো রোগী ভর্তি রয়েছেন। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ ও স্যালাইন রয়েছে। তবে বাকি ওয়ার্ডগুলোতে স্যালাইন সংকট চরমে।

মেডিসিন বিভাগে ১৩৫ জনের রোগী ভর্তি রয়েছেন। সেখানে ৫০ রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ১৫ জন সরকারি স্যালাইন পেয়েছেন। কিন্ত বেশিরভাগ রোগীকে বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একই চিত্র গাইনি, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, শিশু ক্যাজুয়ালিটিসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের।

মেডিসিন বিভাগে দায়িত্বরত স্টাফ নার্স রানা বড়ুয়া বলেন, এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য স্যালাইন পর্যাপ্ত রয়েছে। যত জন ডেঙ্গু রোগী আছে, সে হিসাব করে স্যালাইন আনা হয়। ডেঙ্গু রোগীরা স্যালাইন পাচ্ছেন।’

স্যালাইন না পাওয়ার বিষয়ে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি সাজু ইসলাম বলেন, বাবাকে নিয়ে ৫ দিন হলো ভর্তি রয়েছি। এ কয়দিনে শুধু মাত্র একটা স্যালাইন পেয়েছি। বাকি সব বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। ফার্র্মেসিগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। ৮৭ টাকার স্যালাইন আমাকে ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা কোথায় যাবো বলেন?’

জানা গেছে, ‘চলতি অর্থ বছরে ওষুধের জন্য চমেক হাসপাতালে ২৪ কোটি ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ এসেছে। তারমধ্যে সরকারিভাবে এসেনসিয়াল ড্রাগস লিসিটেড ( ইডিসিএল) থেকে ১৩ কোটি ২৭ লাখ ২৭ হাজার ৯২৫ টাকার ওষুধ কেনা হয়। এগুলো সবই ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্ত রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি চাহিদা মাফিক ওষুধ সরবারাহ করতে পারছে না। যার কারণে চাহিদা মেটাতে বাকি সব ওষুধ টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়। স্যালাইনের জন্য আলাদা কোনো বাজেট নেই। চাহিদা অনুয়ায়ী ইডিসিএলের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা ১০ হাজার চাহিদা দেখালে সেখান থেকে ২-৩ হাজার পাঠায় মাত্র।

স্যালাইন সংকট নিয়ে কথা বলেছেন স্টোর কিপার ডা. হুমায়ুন কবীর। ওয়ার্ডে স্যালাইনের সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই বাড়ছে। তাই ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখানে একটি স্যালাইন ও ওষুধ রোগীদের কিনতে হচ্ছে না। কিন্ত বাইরে সংকট থাকার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। ইডিসিএল ১০ হাজার স্যালাইনের চাহিদার বিপরীতে আামদের দেয় ২ হাজার। আবার টেন্ডারে আকাশ চুম্বি দাম ধরে বসে থাকে। কম বাজেটে কিভাবে এতজন রোগীকে স্যালাইন সরবরাহ করা যায়?’

একই সমস্যার কথা জানিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীদের ওষুধ ও যাবতীয় চিকিৎসা সংকট যেন না থাকে মন্ত্রণালয় থেকে এরকম নির্দেশনা রয়েছে। ’