ডারবান টেস্ট বাঁচাতে পারবে তো বাংলাদেশ?

শেষ দিনে বাংলাদেশ দলের খেলোয়ারদের এই হাসি থাকবে তো?

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আগে এমন নৈপুণ্য কখনোই ছিল না বাংলাদেশের। সব সময়ই হতাশা ছিল সঙ্গী। ডারবানের কিংসমিডে সেই ভাগ্য বদলাতে প্রোটিয়াদের বেশি দূর যেতে দেয়নি মুমিনুলের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের ২০৪ রানে আটকে দিয়ে লক্ষ্যটাকে ধরে রেখেছে ২৭৪ রানে। কিন্তু বাংলাদেশ চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জে টিকে থাকবে তো? উল্টো চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে গেছে। ৬ ওভারে সফরকারীদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১১ রান।

এখন শেষ দিন বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ওপরই নির্ভর করছে সব। ক্রিজে আছেন মুশফিকুর রহিম (০) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৫)। অবশ্য শেষ দিন প্রকৃতিও একটা ফ্যাক্টরে পরিণত হতে পারে।
অবশ্য কিংসমিডে এই স্কোর বা তার বেশি তাড়া করে জেতার নজির খুব একটা নেই। মাত্র ৩টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কা ৩০৩ রান তাড়া করে জিতেছিল। সেখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল কুশল পেরেরার। আর বাংলাদেশেরও সফল রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটি খুবই পুরনো। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের লক্ষ্য টপকেছিল ৪ উইকেট হাতে রেখে।

এমন পরিসংখ্যান সামনে রেখে বাংলাদেশের হয়েছে হতাশাজনক। দ্বিতীয় ওভারেই সাদমান ইসলাম শূন্য রানে আউট হন হারমারের ঘূর্ণিতে। তাতে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ থাকলেন সাদমান। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় এবার অবশ্য প্রতিশ্রুতিশীল কিছু করতে পারেননি। তাকে ৪ রানে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন মহারাজ। এর পর এই মহারাজের বলেই লেগ বিফোরে ফিরেছেন মুমিনুল। বাংলাদেশ অধিনায়ক এই ইনিংসেও মাত্র ২ রানে ফিরেছেন। অথচ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনটায় পুরো সময়ই কর্তৃত্ব ছিল স্বাগতিকদের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। বিনিময়ে আসে ৯৯টি রান। সেখানে দ্বিতীয় আর তৃতীয় সেশনে অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রোটিয়াদের অল্পতে বেঁধে ফেলে সফরকারী দল।
দ্বিতীয় সেশনে ৫২ রানে তুলে নিতে পারে ৪টি উইকেট! তাতে লিড বাড়িয়ে নেওয়ার পথে থাকা প্রোটিয়াদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে বোলাররা। চা পানের বিরতির পর আর কোনও ব্যাটারই মাথা তুলতে পারেননি। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের অসাধারণ লাইন লেংথে বল ডেলিভারি আর অসাধারণ ফিল্ডিং। যা প্রথম সেশনে ভীষণভাবে ভুগিয়েছে।

প্রথম ইনিংসে আগ্রাসী ব্যাট করা এলগার দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন। তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি। তবে হাফসেঞ্চুরির আগেই বিদায় নিতে পারতেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক। দুবার পেয়েছেন জীবন।
লাঞ্চের পর সেই এলগারকে তাসকিন লেগ বিফোরে বিদায় দিলে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয় প্রোটিয়াদের। ১০২ বলে ৬৪ রানে ফেরা প্রোটিয়া অধিনায়কের ইনিংসটি ছিল সর্বোচ্চ। যা ছিল ৭ চারে সাজানো।
চা পানের বিরতির পর রিকেলটন একপ্রান্ত আগলে থাকলেও সতীর্থরা তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। উইয়ান মুল্ডারকে দিয়েই শুরুতে উইকেট উৎসব করেন মেহেদী মিরাজ। অনেক বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে তালুবন্দি হয়েছেন। তাতে ১১ রানে সাজঘরে ফেরেন মুল্ডার।

প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার এই মুহূর্তে ব্যাটারদের তখন ক্রিজেই থাকতে দেননি সফরকারীরা। তাসকিন লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন কেশব মহারাজকে। ৫ রানে এই ব্যাটারের বিদায়ে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে দ্বিতীয় ইনিংসে বেশিক্ষণ টিকবে না স্বাগতিকদের প্রতিরোধ। পরে সিমোন হারমার ও লিজাড উইলিয়ামসকে দুর্দান্ত দুটি রান আউট করলে সেটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। এর মধ্যে হারমারের রান আউটটি ছিল অসাধারণ। বাউন্ডারি লাইন থেকে বদলি ফিল্ডার সোহান দূর থেকে স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন।
পরে ডুয়ানে অলিভিয়ারকে এবাদত এলবিডাব্লিউ করলে ২০৪ রানেই শেষ হয় প্রোটিয়াদের ইনিংস। স্বাগতিকরা এগিয়ে থাকে ২৭৩ রানে। শুধু রিকেলটন ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৪০ রানে ৩টি নেন এবাদত হোসেন। ৮৫ রানে ৩ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৪ রানে দুটি নিয়েছে চোট পাওয়া তাসকিন আহমেদ।