নিজস্ব প্রতিবেদক »
কোরবানের ঈদকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন বাজারে কয়েকদিন ধরে কাঁচামরিচের অগ্নিমূল্য। গত দুই সপ্তাহ ধরে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৬০০ টাকার উপরে বিক্রি হলেও আমদানির কারণে গতকাল সোমবার থেকে হঠাৎ ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে। গত একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম কমেছে ৩০০ টাকার বেশি। এদিকে মূল্যবৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারকে আর পাইকাররা দুষছেন কৃষকদেরকে।
গতকাল সোমবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারে আড়তে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে মানভেদে কেজিতে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকায়। যা রোববার সকালেও বিক্রি হয়েছিল কেজিতে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। একদিনের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম কমেছে ৩০০ টাকার বেশি।
সোমবার রেয়াজউদ্দিন বাজারের কাঁচা মরিচের আড়তগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আমদানি কাঁচা মরিচের প্রভাব বাজারে পড়লেও অনান্য সময়ের তুলনায় কাঁচা মরিচের আড়তগুলো প্রায় খালি। কাঁচা মরিচ ব্যবসায় অনেক আড়তদারেরা ঝুঁকি নিয়ে কাঁচামরিচ গুদামজাত করছেন না। তবে বাজারে আমদানির মরিচ এখনো বাজারে আসেনি।
এদিকে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা বলছেন, কাঁচা মরিচের এই চড়া দামের পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। গত ১০-১২ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বকসিরহাটের খুচরা ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চড়া দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছে। প্রতিবছর কোরবানের ঈদে পাইকাররা এসব কারসাজি করে।
রেয়াজউদ্দিন কাঁচাবাজারে আসা মো. ইরফানুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর কোরবানের ঈদে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়। প্রশাসনকে জবাব দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুত থাকেন। মাঝখানে ভোগান্তি যায় সাধারণ ক্রেতাদের উপর। এবার ঈদে আমি কাঁচামরিচ কিনিনি। আমদানির কথা শোনার সাথে সাথেই দাম কমা শুরু করছে- এ থেকেই প্রমাণ হয়, কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে পাইকার ও আড়তদারদের বক্তব্য, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়নি। অধিক তাপমাত্রার কারণে মরিচের ফুল ঝরে যায়। ফলে দেশীয় বাজারে সংকট সৃষ্টি হওয়ার ফলে দাম বেড়েছে। তবে আমদানি হওয়াতে আর দাম বাড়বে না বলে আশাবাদী তারা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নিউ মুক্তা বাণিজ্যালয়ের মালিক মো. জাফর আহমদ বলেন, ‘এবার নওঁগাতে তেমন ভালো ফলন হয়নি। অধিক তাপমাত্রার কারণে মরিচের ফুল ঝরে যায়। যার ফলে আমাদেরকে কৃষকরা মরিচ দিতে পারছে না। তাই দাম বাড়ছে। তবে রোববার থেকে আমদানি হওয়াতে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম কমতির দিকে।
‘বাজারে এখনো আমদানি মরিচ আসেনি, কিন্তু একদিনের ব্যবধানে দেশীয় মরিচ কেজিতে ৩০০ টাকা কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতদিন কৃষকরা কাঁচা মরিচ ছাড়েনি। আমদানির খবর শোনার পর রোববার রাত থেকে কৃষকরা আড়তদারদের কম দামে কাঁচা মরিচ দিচ্ছে। যার ফলে দাম কমেছে। ’
কাঁচামাল সবজির আড়ত ভাই ভাই ট্রেড্রাসের ম্যানেজার মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘বাজারে প্রায় কাঁচা মরিচ আসে মূলত নওঁগা থেকে। ওখানের কৃষকরা সিন্ডিকেট করে চড়া দরে বিক্রির আশায় ফলন কম তুলেছে এবং আড়তদারদের চাহিদা মতো মরিচ দেয়নি। কিন্তু রোববার থেকে ব্যাপারিদের সস্তায় মরিচ দিচ্ছে। যার ফলে দাম কমতির দিকে।
এদিকে কাঁচা মরিচ বিক্রি হওয়ায় দামে লাগাম টানতে গত ২৫ জুন আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। যদিও ঈদে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভারতের মরিচ আসতে পারেনি। তবে রোববার ভারত থেকে পণ্যটি আসতে শুরু করলে নগরীর পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে কাঁচামরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। এতে আরো দাম কমবে বলে জানান পাইকার ব্যবসায়ীরা।