ফায়ার এক্সটিংগুইসার, বালতি সবই আছে কিন্তু আগুন নেভাতে জানে না অনেকে : চবক চেয়ারম্যান
প্রতিটি নাগরিকের অগ্নি উপকরণ ব্যবহার জানা প্রয়োজন : কলকারখানা অধিদপ্তর
প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে কমে ক্ষয়ক্ষতি : ফায়ার সার্ভিস
ভূঁইয়া নজরুল »
কারখানার দেয়ালে দেয়ালে ফায়ার এক্সটিংগুইসার সিলিন্ডার (আগুন নেভানোর উপকরণ) লাগানো আছে, রয়েছে বালতিও। আগুন নেভানোর জন্য নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু আগুন লাগলে এগুলো ব্যবহার করতে পারে কি কারখানার মানুষগুলো? নাকি শুধু বিদেশি প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর কর্তৃপক্ষ কিংবা কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব উপকরণ রাখা হয়। সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর সৃষ্ট বিস্ফোরণে ৪৬ জনের মৃত্যুর এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান শনিবার রাতে আগুন লাগার পর রোববার সকালেই বিএম কনটেইনার ডিপোতে গিয়েছিলেন। তিনি তখনও বলেছিলেন এবং গতকালও সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপো আমাদের অফডকগুলোর মধ্যে খুবই ভালো মানের একটি ডিপো। তারা আন্তর্জাতিক রুলসগুলো মেনেও চলে। কিন্তু তারপরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’
এ ক্ষতির জন্য কি কারখানায় আগুন নেভানোর দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব কারখানাতে আগুন নেভানোর জন্য গাইড লাইন থাকে এবং কারখানার শ্রমিকরা প্রাথমিকভাবে কিভাবে আগুন নেভাবে সে বিষয়ে তাদের ড্রিলও করা হয়ে থাকে। এখন মনে হচ্ছে এসব ড্রিল যথাযথভাবে হচ্ছে না। আর এতেই ছোটো আগুন বড় আগুনে রূপান্তরিত হচ্ছে।’
ইক্যুপমেন্ট থাকে কিন্তু তা অপারেশন করার দক্ষ জনবলের হয়তো সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘প্রতিটি কারখানা ও ডিপোতে আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব ইক্যুপমেন্ট পরিচালনা করতে কারখানার লোকজন জানে কিনা? কারখানাগুলোতে প্রায়ই ড্রিলও (আগুন নেভানোর মহড়া) হয়, কিন্তু তা হয়তো কার্যকরভাবে হয় না। তারপরও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ছাড়া এসব বিষয়ে কিছু বলার সময় এখনো আসেনি।’
কারখানার প্রতিটি কর্মী ফায়ার ফাইটার হওয়ার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের বন্দরে যখন আগুন লাগে আমাদের নিজস্ব ফায়ার ফাইটার রয়েছে এবং সব ধরনের ইক্যুপমেন্টও রয়েছে। রাখা হয়েছে স্প্রে, ফোমসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ। একইসাথে এসব উপকরণ কিভাবে ব্যবহার করা হবে সেগুলোও শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। শেখানোর পরও ইয়ার্ডের লোকজন ঠিকমতো তা ব্যবহার করতে পারছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ড্রিল করা হয়। কিন্তু অফডকগুলোতে হয়তো তা যথাযথভাবে করা হয় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোন আগুন কিসে নিভে সেই অনুযায়ী উপকরণ বন্দরের ভেতরে রয়েছে। এতে বন্দরের ইয়ার্ডে আগুন লাগার সাথে সাথে তা নেভানো সহজ হয়। এছাড়া আগুন লাগার সাথে সাথে সেখানে থাকা কর্মীরা এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করে আগুন নেভাতে পারে। একইভাবে কারখানার শ্রমিকদেরও তা ব্যবহার শেখাতে হবে।’
কারখানাগুলো নিয়মিত ড্রিল করার এবং আগুন নেভানোর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রেখেই এর অনুমোদন নেয়া হয় উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেন, ‘অগ্নি নির্বাপণে প্রতিটি কারখানার তা মেনে চলার কথা। কিন্তু সেটা মেনে চলা হয় না বলে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। একইসাথে প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব হচ্ছে।’
কলকারখানাগুলোতে আগুন নেভানোর উপকরণ থাকলেও তা নেভানোর জন্য প্রত্যেককে দক্ষ হতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মিনা মাসুদ উজ্জামান বলেন, ‘আমি যে ভবনে বাস করি সে ভবনের অগ্নি নির্বাপণ উপকরণগুলো আমরা কেউ পরিচালনা করতে পারি না। কলকারখানা তথা সব ক্ষেত্রেই এই চিত্র বিদ্যমান। এজন্য আমাদের প্রত্যেক নাগরিককে এসব উপকরণ পরিচালনা করা জানতে হবে। আর তবেই প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন ১৯টি অফডক (বেসরকারি কনটেইনার ডিপো) ছাড়াও শিল্পকারখানাগুলোতে নিয়মিত ড্রিল হয় না। একইসাথে বহুতল ভবনগুলোর লবি ও সিঁড়িতে অগ্নি নির্বাপণের এক্সটিংগুইসার থাকলেও তা ব্যবহার করা হয় না।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও পরবর্তীতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিস্ফোরিত হয়। এতে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয় এবং দুই শতের বেশি মানুষ আহত হন। এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ছয়টি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।