জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কি ঝড়ের ধরনও বদলে যাচ্ছে

এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম ছিল মিধিলি। আর দশটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো হলেও এবারে ব্যতিক্রম ছিল এর গতি নিয়ে। অর্থাৎ এত বছর আমরা ৪৮ বা তারও আগে পূর্বাভাস পাওয়া যেত কিন্তু এবার বলতে না বলতেই ঝড় এসে উপস্থিত। ঘূর্ণিঝড়টিকে একটু ব্যতিক্রম বলা হচ্ছে। কারণ উপকূলের কাছাকাছি এসে দ্রুত তা ঝড়ে রূপান্তরিত হয়েছে।
২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। সেই সিডর ১৬ নভেম্বরে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়ে উপকূলে আঘাত হেনেছিল। উপকূলে আঘাত হানার ছয় দিন পূর্বেই পাওয়া গিয়েছিল ঝড়ের আভাস। শুধু সিডরই নয়, গত কয়েক দশকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়া প্রায় সব ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রেই একই চিত্র ছিল। তবে অক্টোবরে হামুন উপকূলের কাছাকাছি এসে দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছিল। মিধিলির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানানো হয় ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা ও পায়রা থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হচ্ছে। নি¤œচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। গভীর নি¤œচাপটি উত্তর-পূর্বদিকে সরে গিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা উপকূলের কাছ দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। রাত ৯টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয় ‘মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। আর এটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তাহলে এর নাম হবে মিধিলি।’
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিতে দেরি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘যখন ঘূর্ণিঝড়ের শর্ত পূরণ করবে তখনই আমরা ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘোষণা দিই। আর এটি আবহাওয়া অধিদপ্তর এককভাবে নয়, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক স্টেশন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এ ঝড়টি খুব দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে।’ সাধারণত কোনো ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ যদি ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয় তখন ঘূর্ণিঝড় বলা হয়, ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হলে তীব্র ঘূর্ণিঝড়, ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে হারিকেনের গতিসম্পন্ন তীব্র ঘূর্ণিঝড় এবং ২১৯ কিলোমিটারের বেশি হলে সুপার সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রিজিলেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিল্লুর রহমানের মতে, ‘গভীর সাগরে যেসব ঝড় সৃষ্টি হয় সেগুলো অনেক সময় নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলে এসে আঘাত হানে। তখন সময় অনেক বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লঘুচাপ থেকে নি¤œচাপ ও নি¤œচাপ থেকে গভীর নি¤œচাপ ও পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর প্রক্রিয়াটা উপকূলের কাছাকাছি এসে হচ্ছে। ফলে সময় কম পাওয়া যাচ্ছে।’
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হবে। অকালে বন্যা হবে। একদিকে খরা চলবে তো অন্যদিকে বৃষ্টিতে তলিয়ে যাবে। এসব সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করার ফল এখন আমরা হাতেনাতেই পাচ্ছি। এর ফলে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতি-প্রকৃতিও অচেনা হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক সক্ষম হলেও পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও আধুনিক হতে হবে। সে সঙ্গে দক্ষ জনবলও নিয়োগ দিতে হবে। তা না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।