জরাজীর্ণ ভবনে মেডিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট দিয়ে চিকিৎসা!

চট্টগ্রাম কলেজের ‘মেডিক্যাল সেন্টার’

নিলা চাকমা »

সারাদেশে সুনাম রয়েছে চট্টগ্রাম কলেজের। বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কলেজটিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে রয়েছে একটি ‘মেডিক্যাল সেন্টার’। প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও জরাজীর্ণ ভবনে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। নেই চিকিৎসক, পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। এতে উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষক এবং কলেজের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, প্যারেড কর্নারের মাঠ ঘেঁষে ২০০৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এই মেডিক্যাল সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। তৎকালীন প্রফেসর মো. জসীম উদ্দীন মেডিক্যাল সেন্টারটি উদ্বোধন করেন। তখন একজন চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল অ্যাসিটেন্ট দিয়ে সেবা কার্যক্রম চলে আসছিলো। মেডিক্যাল অ্যাসিটেন্ট দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিয়ে আসলেও চিকিৎসক বার বার বদল হয়েছে। সম্মানি কম হওয়ায় কোনো চিকিৎসক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

বর্তমানে চিকিৎসকও নেই। মেডিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট দিয়েই প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। মেডিক্যাল সেন্টারে দুটো শয্যা, একটি অক্সিজেন, একটি নেবুলেটর, প্রেশার মাপার যন্ত্র, জ্বর মাপার যন্ত্রসহ কয়েকটি যন্ত্র রয়েছে। জ্বরের ওষুধ, স্যালাইন ছাড়া আর তেমন কোনো ওষুধও নেই। রোগীদের বহন করার জন্য কোনো ট্রলির ব্যবস্থাও নেই। কোনো শিক্ষার্থী মাথাব্যাথা নিয়ে পড়ে গেলে অন্য শিক্ষার্থীরা ধরে নিয়ে আসেন। এখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা সেবা নিয়ে থাকেন।

সরেজমিনে ২০ জুন দেখা যায়, প্যারেড কর্নারের পাশে মেডিক্যাল সেন্টারটি অবস্থিত। এক তলা ভবনের মাঝখানে মেডিক্যাল সেন্টার। পুরো ভবনের দুই পাশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। জানলার কাঁচগুলো ভেঙে পড়েছে, দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। আর সেই জরাজীর্ণ ভবনেই চলে চিকিৎসা সেবার কাজ।

উন্নত চিকিৎসা সেবার দাবি নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাফরিন ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কলেজে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়ে। অনেকের রোগ বালাই রয়েছে। তাদের মধ্যে যে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হতে পারেন। এজন্য সেবা দিতে দরকার উন্নত চিকিৎসাসেবা। কিন্ত প্রাথমিক সেবা বাদে সেখানে আর কোনো চিকিৎসা সেবা নেই।’

ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মহেরিন হক বলেন, ‘আমদের মেডিক্যাল সেন্টারে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। যার কারণে উন্নত সেবা পাওয়া যায়না। আমাদের নিজস্ব মেডিক্যাল সেন্টার থাকা সত্ত্বেও বাইরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। দ্রুত মেডিক্যাল সেন্টারের বরাদ্দ বাড়ানো দরকার; যাতে শিক্ষার্থীরা উন্নত সেবা পায়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, মেডিক্যাল সেন্টার রয়েছে নামমাত্র। নেই ওষুধ, নেই চিকিৎসক। জ্বর, প্রেশার মাপা ছাড়া এখানে আর কি সেবা পাওয়া যায় আদৌ জানি না। অথচ এটি উন্নত করা গেলে এখানেই আমরা সেবা নিতে পারতাম। বাইরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হত না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একটু আন্তরিক হলেই শিক্ষার্থীরা এবং কর্মকর্তারা সেবা পেত।’

মেডিক্যাল সেন্টারটিতে দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিয়ে আসা মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট সাহাদাত পাটোয়ারি বলেন, এখানে তো ভালো বরাদ্দ নেই। শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে যেভাবে ছিলো এখনও ঠিক একিইভাবে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমসার কথা জানাতে হবে। তা না হলে এভাবেই পড়ে থাকবে।’

মেডিক্যাল সেন্টারের সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে জানা যায় তিনি ছুটিতে আছেন।

কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর সুব্রত বড়–য়া বলেন, মেডিক্যাল সেন্টারে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় এখানে। মেডিক্যাল সেন্টারটি আরো উন্নত করতে দুটো শয্যা যোগ হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেগুলোর অর্ডার দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ না আসায় কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকেই সব কিছু করা হয়। ফলে সংকট রয়েছে। তবে এটিকে আমরা উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’