সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামের পটিয়ায় রফতানিমুখী একটি পোশাক কারখানার গুদাম থেকে সোয়া কোটি টাকার কাপড় চুরির ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই জানিয়েছে, গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে চক্রের একাধিক সদস্যের পাশাপাশি চোরাই পণ্য কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতরাও আছেন। এই চক্রের সদস্যরা আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য লুট করত। সম্প্রতি মহাসড়কে নজরদারি বাড়ায় তারা বড় বড় কারখানার গুদাম টার্গেট করে চুরি শুরু করেছে।
আর সেই চোরাই পণ্য কম দামে কিনে নিয়ে বিক্রির সঙ্গে জড়িত নগরীর টেরিবাজারের অন্তত ১০ জন পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ীর ওপর নজরদারি শুরু করেছে পিবিআই। খবর সারাবাংলা’র।
পটিয়া উপজেলার পাচুরিয়া হুলাইন এলাকায় দ্য নিড অ্যাপারেলস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার গুদামে সম্প্রতি চুরি সংঘটিত হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ পটিয়া থানায় ১৪৮ রোল রফতানির জন্য মজুদ ডেনিম ফেব্রিকস চুরির অভিযোগ করেন। সুরক্ষিত গুদামে চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশে তদন্তে নামে সংস্থাটির চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা জানান, গুদামের আশপাশ থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। ফুটেজে গভীর গুদামের পেছনদিকে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে চোরের দল প্রবেশ করে জানালার লোহার গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢুকে কাপড় নিয়ে যাবার দৃশ্য দেখা যায়। ১৭ আগস্ট, ২২ আগস্ট এবং ২৫ আগস্ট রাতে তিনদিন ধরে তিন দফায় একইভাবে প্রবেশ করে চুরি সংঘটিত করে।
‘তিনদিনই প্রচুর বৃষ্টি ছিল। গুদামের সিকিউরিটি স্টাফরা ছিলেন সামনের দিকে। বিশাল আকারের গুদাম। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে পেছনদিকে চোর প্রবেশের বিষয়টি সিকিউরিটি স্টাফরা বুঝতে পারেননি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, চোরেরা মুখোশ পরিহিত ছিল। তারা কাপড়ের রোল বের করে সড়কে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে তোলে। শেষে একটি সিএনজি অটোরিকশা ও পেছনে একটি প্রাইভেট কারের পাহারায় পিকআপটি সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনদিন ধরে একই প্রক্রিয়ায় কাপড় চুরি করে সেগুলো আনা হয় নগরীর টেরিবাজারে কাপড়ের পাইকারি মার্কেটে’- বলেন নাইমা সুলতানা।
পিবিআইয়ের তদন্তের মধ্যেই গত ১ সেপ্টেম্বর ১০১ রোল কাপড় নগরীর টেরিবাজার কাটাপাহাড় লেইন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কারখানার কর্মকর্তারা গিয়ে সেগুলো শনাক্তের পর নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হয়।
পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (মেট্রো) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, টেরিবাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ীরা চোরাই কাপড়গুলো কিনেছেন বলে তথ্য পান তারা। তদন্তে পাঁচজনকে শনাক্ত করে নগরীর বাকলিয়ায় অভিযান চালিয়ে তিনজন ও হাটহাজারী-রাঙ্গুনিয়া থেকে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা গুদাম থেকে চুরি করা কাপড় কেনাবেচার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছিল বলে স্বীকার করেন।
তাদের দেওয়া তথ্যে গুদামে চুরির সঙ্গে জড়িত চারজনের একটি চক্রকে সীতাকু-সহ নগরীর বিভিন্নস্থান থেকে এবং চোরাই কাপড় কেনার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে মধ্যস্থতা করা একজনকে নগরীর পাহাড়তলী গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে আছেন, চোরচক্রের সর্দার আবুল কালাম কালু (৫২), তার সহযোগী মাসুদ আলম ওরফে পিচ্চি মাসুদ (৪৭), সামছুল আলম (৫৩) ও পিকআপ চালক মো. পারভেজ (২৬) এবং মধ্যস্থতাকারী আরিফুর রহমান চৌধুরী (৪০), আবুল বশর প্রধান (৪৫), মোহাম্মদ মুজিবুল হক (৪৫), মো. পারভেজ (২৬), মোহাম্মদ ফারুক (৪০) ও তার ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় (২০)।
মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘এখানে তিন ধাপে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। প্রথম ধাপে চুরি যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন কালু ও দিদার। দিদারকে আমরা এখনো গ্রেফতার করতে পারিনি। চুরি করা কাপড় কেনার জন্য টাকা বিনিয়োগ করেছিল তিনজন, আরিফুর, মুজিবুল ও নগরীর অক্সিজেন এলাকার এক ব্যক্তি। ১৭ আগস্ট চুরি করা পণ্য অক্সিজেনের ওই ব্যক্তিকে দেয় কালু। ২২ আগস্টের চুরি করা কাপড় মুজিবুল হককে এবং ২৫ আগস্টের চুরি করা পণ্য আরিফুরকে দেয় কালু। এই তিনজন আবার চোরাই কাপড়গুলো টেরিবাজারে এনে বিক্রি করে। যারা কিনেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হওয়া একটি কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য চুরির অভিযোগে গত ১২ সেপ্টেম্বর নগরীর পাহাড়তলী থানায় গ্রেফতার আরিফুরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয় বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।
গ্রেফতার ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) মো. ইলিয়াছ খাঁন বলেন, ‘গ্রেফতার পিচ্চি মাসুদের নেতৃত্বে একটি গ্যাং একসময় মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য লুট করত। ইদানিং তারা মহাসড়কে ডাকাতি থেকে সরে এসেছে। এখন তাদের টার্গেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল গুদামগুলো। চট্টগ্রাম থেকে একেবারে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত মহাসড়কের কাছাকাছি এলাকায় যত রফতানিমুখী কারখানায় গুদাম আছে, সেগুলো তাদের টার্গেট। নোয়াখালীতেও একটি গুদামে এই চক্রের চুরির তথ্য আমরা পেয়েছি।’