গৃহকর্তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে পরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ

শালিসী বৈঠকে এক ধর্ষক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী :

বাঁশখালীতে এতিম এক কিশোরী গৃহপরিচারিকাকে গৃহকর্তার দুই ছেলের ৬ মাস ধরে ধর্ষণের পর গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এরপর এ কিশোরীর গর্ভপাত করানো হয়।

গত মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় স্থানীয় কাউন্সিলর আজগর হোসেনের ব্যক্তিগত শালিসকেন্দ্রে ওই ঘটনার শালিস করার সময় পুলিশ ওখান থেকে এক ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে। অপর ধর্ষক পালিয়ে গেছে। এ ঘটনা ঘটেছে বাঁশখালী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লস্কর পাড়ায়। ধর্ষিতা বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা দায়েরের পর গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষিতার বয়স ১৪ বছর। তার বাবা কয়েক বছর আগে তার মা আনোয়ারা বেগমকে ছেড়ে অন্য একজন মহিলাকে বিয়ে করেন। অভাবের সংসারে মা আমেনা বেগম গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে চলে যান। বাবা-মা হারা কিশোরীটি একা হয়ে পড়লে এবাড়ি-ওবাড়ি কাজ করে পেট চালায়। সর্বশেষ ৬ মাস পূর্বে বাঁশখালী পৌরসভার লস্কর পাড়ার মকসুদুল হকের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার দায়িত্ব নেয়।

ওইখানে গৃহকর্র্তা মকসুদুল হকের দুই ছেলে শহীদুল ইসলাম ও জিয়াউল হক একে অপরের অজান্তে ৬ মাস ধরে বাঁশখালীর নিজ বাড়ি এবং চট্টগ্রামস্থ বাকলিয়া থানাধীন ভাড়া বাসায় পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসছিল। কিশোরীকে নানা ভয়ভীতির মধ্যে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণের ঘটনায় কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়লে স্থানীয় ছৈয়দুল আলম নামের এক ব্যক্তির স্ত্রী নার্গিস আক্তারের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ৩১ আগস্ট সোমবার কিশোরীর গর্ভপাত ঘটায়।

এ খবর জানাজানি হলে  গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় মিয়া বাজারস্থ ব্যক্তিগত কার্যালয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আজগর হোসেন শালিসী বৈঠকের উদ্যোগ নেন। ধর্ষকদের পুলিশে না দিয়ে এ জঘন্য ঘটনার কাউন্সিলরের শালিসী বৈঠকে গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং গ্রামবাসী প্রতিবাদ জানালে নিরুপায় হয়ে কাউন্সিলর আজগর হোসেন থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ধর্ষক শহীদুল ইসলামকে গ্রেফতর করলেও তার ভাই অপর ধর্ষক জিয়াউল হককে গ্রেফতর করতে পারেনি।

ধর্ষিতা দুই ধর্ষকের নাম বললেও মামলার এজাহারে গ্রেফতার শহীদুল ইসলামকেই শুধু আসামী করা হয়েছে। বাদি হয়েছেন ধর্ষিতা। এছাড়া টাকার বিনিময়ে গর্ভপাত ঘটানো নার্গিস আক্তারকে ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে। অবশ্য থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হক বলেন, অপর ধর্ষক জিয়াউল হক নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকা ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। সেকারণে ওই ধর্ষকের মামলা বাকলিয়া থানায় করতে হবে। তাই এজাহারেজিয়াউল হককে আসামী করা হয়নি।

বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজিম উদ্দিন বলেন, ওই ধরনের ধর্ষণের ঘটনায় কোন কিশোরী এজাহার দায়ের করেনি। এজাহার দিলে মামলা নেয়া হবে।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘ধর্ষিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। গ্রেফতার ধর্ষককে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’