গুলি করে আরো দু’জনকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে যেন খুনোখুনির প্রতিযোগিতা চলছে। প্রশাসনের কড়াকড়ির পরও দুর্বৃত্তরা তাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনও অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় বলে জানিয়েছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। গত দেড় মাসে এ আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা নেতাসহ ২২ জন রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছে।

এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১৭-এর সি ব্লকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহতরা হলেন ক্যাম্প সি ব্লকের আয়াত উল্লাহ (৪০) ও একই ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইয়াছিন (৩০)। ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এডিআইজি সৈয়দ হারুনুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়ার ১০ নম্বর ক্যাম্পে মো. জসিম (২৫) নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত জসিম ওই ক্যাম্পের ব্লক-৩৪-এর বাসিন্দা ছিলেন।

জসিমের স্ত্রী সেবিকা বেগম জানান, সন্ত্রাসীদের অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকির জন্য দীর্ঘদিন ধরে নিজ ঘরে রাতযাপন করতে পারতেন না জসিম। মাঝেমধ্যে স্ত্রী ও সন্তানদের দেখতে শেডে যেতেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে চুপিচুপি ঘরে গিয়ে স্ত্রীর কাছে রাতের খাবার চেয়েছিলেন তিনি। রান্না হয়নি জানালে তিনি পাশে শ্বশুরের ঘরে যান। সেখানে ভাত খাওয়ার সময় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে মারধর করতে করতে তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায় তারা। এরপর ১০ নম্বর ক্যাম্পের সরকারি প্রশাসনিক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (সিআইসি) অফিসসংলগ্ন রাস্তার ওপর তিন রাউন্ড গুলি চালানোর পর জসিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত হন সেবিকা বেগম।

২০ থেকে ২৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত ক্যাম্পের সিআইসি-১০ অফিসসংলগ্ন রাস্তায় এ হত্যাকা- চালিয়েছে বলে জানান ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ ফারুখ আহমেদ।

এদিকে, ৮ এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক মো. আমির জাফর গত বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা নেতা ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেন। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি ব্লক রেইড ও অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।

এ ছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং-২ ইস্ট ক্যাম্পের ফায়ার সার্ভিস অফিসের ভেতরে মো. সালাম (৩৫) নামের আরেক রোহিঙ্গাকে গুলি করে পালিয়ে যায় একদল সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। ওই সময় তাকে পাঁচ থেকে ছয়টি গুলি করা হয়। সালাম পিঠে গুলিবিদ্ধ হন বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর উখিয়ার ১৯ নম্বর ক্যাম্পে দুই রোহিঙ্গা মাঝিকে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকা-সহ গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেড় মাসে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর হাতে ২২ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছে।