খরতাপে জনজীবনে হাঁসফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক »

কয়েকদিন ধরে টানা গরম বাড়ছে। খরতাপে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। তাপদাহের কারণে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কমেছে। সড়কে কুকুরগুলোকে দেখা যাচ্ছে পানির সন্ধান করতে। বনের পশু-পাখিরাও পানির সন্ধানে লোকালয়ে ছুটছে। তৃষ্ণার্ত পাখিরা ধরা দিচ্ছে দালানের ব্যালকনিতে। যানবাহন রাস্তাঘাটে মানুষের হাহাকার, এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে গরমের এ তীব্রতা স্থায়ী হবে আরও তিন দিন ।

স¦স্তির তো অবকাশ নেই, বরং প্রতিদিনই যেন তাপমাত্রা বাড়ছে। রাস্তাঘাটে দিনমজুর শ্রমিকেরা ধুঁকছেন। অঝোরে ঝরতে থাকা ঘাম প্রশমিত করতে কেউ ঢালছেন মাথায় পানি, কেউ বা বারবার গামছায় মুছে নিচ্ছেন ঘাম। গরমের তীব্রতা এতোটাই বেশি যে, মানুষ কিছুতেই পেরে উঠছেন না। গরমের সঙ্গে শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা রকম রোগ বালাইও। প্রায় অনেকের জ্বর সর্দি কাশি ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিচ্ছে। এসব জ্বর কাশি সহসা সারছেও না।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক নূর নাহার বলেন, ‘বিশেষ করে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বি ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল মেডিক্যালে শুধু ডায়রিয়া রোগীই ভর্তি হয়েছে প্রায় ১১০জন। প্রতিদিনই এমন ভর্তি হচ্ছেন। সপ্তাহব্যাপী প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ’

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আব্দুর রব বলেন, ‘প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। সেই সাথে সিভিয়ার ডিসেন্ট্রি দেখা দিচ্ছে। বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে টাইফয়েড ও ডিসেন্ট্রি দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগই বাইরের শরবত খাওয়ার কারণে হচ্ছে। সুতরাং বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। গরমের এসব রোগ প্রতিহত করতে বেশি বিশুদ্ধ পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। সুতির কাপড় চোপড় পরিধান করতে হবে। বাইরে বের হলে ক্যাপ, ছাতা এসব ব্যবহার করতে হবে। গরমে সবচেয়ে উপকারী রাইস স্যালাইন। আর অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।’

আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এটা এখনও অনেক দূরে আছে। তাই আজকালের মধ্যে এর গতিবিধি বোঝা যাবে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তাপমাত্রা আজকের (৯ মে) মতোই শুষ্ক থাকবে অর্থাৎ ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ৩ দিন গরম থাকবে।’

সাগরে লঘুচাপের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক জানিয়েছেন, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সোমবার মধ্যরাতে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে মঙ্গলবার নিম্নচাপে রূপ নেবে।

নি¤œচাপে রূপ নেওয়ার পর আরও ঘনীভূত হয়ে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এটি আরও শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর অবস্থান, গতি-প্রকৃতি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কবার্তা জানানো হবে।

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, মঙ্গলবার বিকালে নি¤œচাপে পরিণত হওয়ার পর বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র। প্রথম দিকে উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও ১২ মে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।

সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিনিম্নচাপ, গভীর নি¤œচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে নাম হবে মোকা (গড়পযধ), এটা ইয়েমেনের দেওয়া নাম।

আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।তবে সম্ভাব্য সেই ঘূর্ণিঝড় কবে কোন এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা স্পষ্ট হবে।

লোডশেডিং
অসহ্য গরমের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৮ মে) দিনে (অফ পিক আওয়ারে) চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়ে ২৫০-৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে আসবে। তখন লোডশেডিং কমবে।