কোভিড এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

মোহাম্মদ নুর খান »

কোভিড-১৯ এর নির্মম থাবায় পুরো বিশ্ব আজ অনেকটাই বিপর্যস্ত, স্থবির। অনেক দেশ এ অদৃশ্য শত্রুর মোকাবেলা করে নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারলেও এখনও অনেক দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত যুদ্ধরত রয়েছে এ অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে। এসব দেশের মানুষ আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো নূতন নূতন ভ্যারিয়েণ্ট -এর আক্রমণের শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশের অবস্থাও তথৈবচ। বর্তমানে আমাদের শনাক্তের হার ৩০ শতাংশেরও উপরে। যদিও বা এ কদিনে কিছুটা কম সংক্রমিত হচ্ছে। এ ক’দিন মৃত্যুও ছিল দু’শ’রও অধিক।
করোনার শুরুতেই এর নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টার কোন কমতি ছিল না। শুরু থেকেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেশ কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও সরকারের গৃহিত নানা প্রচেষ্টা ছিল দেখার মতো। খাদ্য সহায়তা প্রদান, নূতন হাসপাতাল চালুসহ সরকার করোনা মোকাবেলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবারও সরকার নানা উপায়ে চেষ্টা করছে এ মহাদুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে। লকডাউন দেওয়া থেকে শুরু করে ৩৩৩’র মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে । কদিন আগে শ্রমিক, দিনমজুর ও গরীব অসহায় মানুষদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আশাকরি সঠিকভাবে বণ্টন হলে এ উদ্যোগ অসহায় মানুষের কাজে আসবে।
কিছুদিন আগের কথা। চট্টগ্রামের একটি সরকারি সংস্থা থেকে আমাদের এলাকার দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ দেয়া হলো। আমি দেখলাম এ ত্রাণের বেশির ভাগই পৌঁছে দেয়া হলো অবস্থাúন্ন মানুষের কাছে। আমার লোক বলে কথা। অর্থাৎ এ ত্রাণবিতরণের ক্ষেত্রেও আমরা গরিব অসহায় মানুষের চাইতে নিজের লোকদের দেওয়াকেই বেশি পছন্দ করি। তাও আবার অবস্থাপন্ন। এখানেও রাজনীতি, নিজের পাল্লা ভারি করার অপচেষ্টা আর কি ! দেশ ও দলের স্বার্থে যে কোন সময় আমাদের এ ধরনের হীন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে । সরকারের প্রণোদনার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে যেন এ ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। অন্যথায় সরকারের এ শুভ উদ্যোগ সফল হবে না। তাই সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি মাথায় রাখার জন্য অনুরোধ রইলো। আরেকটি বিষয় সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে ভীষণ। সেটি হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতা। একেতো কোভিড তার উপর দ্রব্যমূল্য মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে অসন্তোষ, ক্ষোভ, কষ্ট ও দুঃখের সম্মিলন ঘটছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল হয়তো সাধারণ মানুষের এ অনুভূতি অনুভব করতে পারছে না। না জানি তাঁরা বুঝেও বুঝছেন না। এ কোভিডকালে ৫০/৫৫ টাকারও উপরে চালের কেজি, ১৫০/১৫৫টাকা সয়াবিনের দাম। মসুর ডালের দামও হাতের বাইরে। মাছ- মাংসের কথা নাইবা বললাম। কোভিডের এ মহাদুর্যোগে চাল-ডাল-তেল-পেঁয়াজসহ প্রয়োজনীয় সবজির মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা খুবই জরুরি। কথায় আছে অন্ধে চায় দু’ চোখ। তেমনি দেশের সাধারণ মানুষও যারা গরীব অসহায় তারা পেট ভরে দু’বেলা ডাল ভাত খেতে পারলেই তৃপ্ত হয়। আর যারা সরকারে থাকেন তাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে দেশের এ সকল গরীব অসহায় মানুষদের চাহিদা পূরণে সচেতন থাকা, সতর্ক থাকা।
এ ক্রান্তিকালেও আমাদের রেমিটেন্স থেমে নেই। বর্তমানে আমাদের মাথা পিছু আয় ২২২৭ ডলার। আর কদিন পরেই আমরা যুক্ত হবো টানেলের যুগে। বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেশের অর্থে পদ্মা ব্রিজ বাস্তবায়ন শেষের পথে।
দেশের এক কোটিরও মানুষ আজ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায়। প্রতি বছর জানুয়ারির প্রথম দিনে দেশের সকল শিক্ষার্থীরা নতুন বই পায়। ঢাকার পূর্বাচলে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ অবকাঠামো আইকনিক টাওয়ার বা বঙ্গবন্ধু টাওয়ার। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো সব বাস্তবায়ন হলে আমাদের চাকরির জন্য আর বসে থাকতে হবে না। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলেই ১০ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও আমরা বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করতাম। আজ আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫০০০ মেগা ওয়াট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আমাদের বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।
এ সকল অর্জন সত্যিই অভাবনীয়। আমি মনে করি সরকারের অসাধ্য কিছু নেই। যে কোন উপায়ে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে হবে। এসব অর্জনের মতো চাল-ডালÑতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিসের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষের শান্তি ও তৃপ্তির মধ্যেই একটি সরকারের সার্থকতা, সফলতা নিহিত। সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই হচ্ছে একটি সরকারের মূল প্রাণশক্তি যা সরকারের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবেও কাজ করে।
সরকারে কি বিরোধী দলে, দেশের সকল দুঃসময়ে শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষের পাশেই ছিলেন, আছেন।
সে জন্যই এ দেশের সাধারণ মানুষ ওয়ান ইলেভেনে তৎকালীন সরকারকে মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। এ মহাদুর্যোগে সরকারের মূল এবং প্রধান কাজ হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। করোনার দুঃসময়ে মানুষকে স্বস্তি দেওয়াই সরকারের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।
লেখক : প্রাবন্ধিক