কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাবে কে

কতবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তা চট করে বলা যাবে না, হিসাব করে বলতে হবে। তবে সর্বশেষ ঢাকঢোল পিটিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছিল বছর চারেক আগে। সে উচ্ছেদ অভিযান মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এখন সে পুরোনো দখলদারদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন সরকারি-বেসরকারি দখলদার। একটি দৈনিক লিখেছে, ক্রমাগত দখল, ভরাট ও ইজারা প্রক্রিয়ায় ৩৬ বছরে নদীটির প্রশস্ততা কমেছে অর্ধেকেরও বেশি।
কেবল শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন কর্ণফুলীর উত্তর তীরে ফিশারিঘাট মাছ বাজার এলাকায় নদীর প্রশস্ততা কমে এখন হয়েছে ৪৪৬ মিটার। ১৯৮৫ সালের হিসাবে প্রশস্ততা কমেছে ৫০৬ মিটার। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নদীর জায়গা ইজারা নিয়ে এই মাছ বাজার গড়ে তোলা হয় ২০১৫ সালে। কর্ণফুলী ঘিরে এই বাজারসহ এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন। বারিক বিল্ডিং থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত উচ্ছেদ চালানোর দায়িত্ব ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের। সে সময় দুই পক্ষ মিলে হাজারখানেক স্থাপনা উচ্ছেদ করে। অভিযানে ফিশারিঘাটের মাছবাজারটি নিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ প্রশ্ন কেউ কেন তুলছে যে নদী ইজারা দেওয়ার কর্তৃপক্ষ কি চট্টগ্রাম বন্দর। এই সংস্থা কি এই নদীর মালিক? মনে হয় নদীর মালিক কে এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরি। কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ অনুসারে জায়গাটি তাদের দাবি করে ইজারা দেয়।
২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত একটা আপিল শুনানি বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী ওই শুনানির পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন, জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের স্থাপনাসংলগ্ন স্থানে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের প্রশস্ততা কমেছে। গুগল মানচিত্র পর্যালোচনা করে ওই এলাকার বিভিন্ন সময়ের নদীর ক্রমহ্রাসমান প্রশস্ততা তুলে ধরা হয় পর্যালোচনায়।
এতে দেখা যায়, ১৯৮৫ সালে ওই জায়গায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৯৫২ দশমিক ২৮ মিটার। ২০০০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৯৩১ দশমিক ১২ মিটার। ২০১০ সালে দাঁড়ায় ৬১৫ মিটার। ২০১৫ সালে প্রশস্ততা ছিল ৫৪৮ মিটার। ২০২১ সালে হয় ৪৪৬ মিটার।
এভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদীটি দখলে দূষণে মরে যাবে? এই নদী রক্ষায় কত আন্দোলন-সংগ্রাম হলো, আদালত পর্যন্ত গড়ালো কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আদালতের রায় উপেক্ষিত হলো, নদী কমিশনের সুপারিশ ও নির্দেশ অমান্য হলো, নদী দিনদিন শুকিয়ে গেল কিন্তু দখলদারদের তাতে কিছুই আসল-গেল না। তারা বহাল তবিয়তে টিকে থাকল। তাই আমাদের সরল প্রশ্ন কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাবে কে?