কঠিন বিপদেও নামাজ ত্যাগ না করাই কারবালার শিক্ষা

শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের ৭ম দিনে বক্তারা

নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ ও ফরজ বিধান। প্রিয় নবীর (দ) স্মরণ ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ) স্মরণের মাধ্যমে যে নামাজ কায়েম করা হয় তাই প্রকৃত নামাজ। আল্লাহ পাকের নৈকট্য এবং কবরে হাশরে নাজাত পেতে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। কারবালা ময়দানে নবী পরিবারের সদস্যগণ, হযরত ইমাম হোসাইন (রা) ও তাঁর সৈন্যরা কঠিন বিপদে, চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নামাজ ছাড়েননি। অন্যদিকে ইয়াজিদিরাও তাদের তাঁবুতে নামাজ পড়েছে। কিন্তু সেই নামাজ ছিল অগ্রহণযোগ্য, প্রাণহীন ও অন্তঃসারশূন্য। কারণ ইয়াজিদিদের নামাজে ইশকে মুস্তফা, হুব্বে মুস্তফা ও তাজিমে মুস্তফা (দ) তথা প্রিয় নবীজীর (দ) স্মরণ ছিল না। প্রিয় নবী (দ) ও আহলে বায়তের তাজিম ও স্মরণ করা হয় না এমন নামাজ ও ইবাদত আল্লাহ পাকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্লাজায় আহলে বায়তে রাসূল (দ) স্মরণে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের ৭ম দিনে গতকাল বুধবার আলোচকরা এ কথা বলেন।

মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার কুতুবদিয়া দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন পীরে ত্বরীকত শাহজাদা মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল করিম কুতুবী।

মাহফিলে মাকামে মাহমুদ ও আজমতে মোস্তফা (দ) বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা দারুন্নাজাত কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি ওসমান গনি সালেহী। তিনি বলেন, হাশরের ময়দানে উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন প্রিয় নবী (দ)। প্রিয় নবীজীর (দ) বিশেষ মর্যাদাময় পজিশন হচ্ছে মকামে মাহমুদ। যা অন্য কোনো নবী রাসূলের সৌভাগ্যে জুটবে না। নবী করিম (দ) উম্মতের সর্ববিধ অবস্থা দেখেন, জানেন এবং হাশরের ময়দানে অসহায় উম্মতের জন্য সুপারিশ করে তাদের জান্নাতে নিয়ে যাবেন এই হচ্ছে আমাদের আক্বিদা বিশ^াস।

হাসনাইনে করিমাইনের পরিচয় ও মর্যাদা বিষয়ে আলোচনায় আল্লামা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রিজভি বলেন, হযরত ইমাম হাসান (রা) ও হযরত ইমাম হোসাইন (রা) জান্নাতের দুটি ফুল। তাঁদেরকে যাঁরা ভালোবাসবে আল্লাহ পাকও তাঁদের ভালোবাসবেন। আহলে বায়তে রাসূলের (দ) তাজিম সম্মান মর্যাদা সমুন্নত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিলকে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার মাহফিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, মুসলিম বিদ্বেষী চক্র মুসলমানদের ঈমান আক্বিদা হননে বহুমুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। শিয়া, ওহাবি, মওদুদী ও কাদিয়ানিদের লেলিয়ে দিয়ে আজ মুসলমানদের ঈমানি চেতনা দুর্বল করে দেয়া হচ্ছে এবং মুসলমানদের শক্তি খর্ব করছে দেশি-বিদেশি এই কুচক্রীরা। ঈমান আক্বিদা সুরক্ষার তাগিদ দেয়া, মুসলমানদের অন্তরে নবীপ্রেম ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ) মহব্বতের চেতনা জাগ্রত করাই এই আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের মূল লক্ষ্য। তিনি মাহফিলে সমবেত জনতাসহ নানাভাবে সহযোগিতাকারী সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল করিম কুতুবী বলেন, মহররম মাস এলে নবী-ওলীপ্রেমী ও আহলে বায়তপ্রেমী মুসলমানরা ঈমানি চেতনায় জেগে ওঠে। আহলে বায়তে রাসূলের (দ) মহব্বত, ভালোবাসা ও পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে আমরা পরিপূর্ণ কামিয়াবি অর্জন করতে পারি।
মাহফিলে কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী শায়খ আহম্মদ বিন ইউসুফ আজহারী। নাতে রাসূল (দ) পরিবেশন করেন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কাদেরী।

এতে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু, আঞ্জুমান ট্রাস্টের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মহসিন, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, কাউন্সিলর মুহাম্মদ মোরশেদুল আলম, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মহসিন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ও সমাজসেবক সৈয়দ সেহাব উদ্দিন আলম।

মাহফিল সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক আল্লামা ড. মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ ও হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আহমদুল হক।

মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান সমন্বয়ক পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আলহাজ মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন, আওলাদবৃন্দ ও বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

মিলাদ কিয়াম শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, দেশ ও বিশ^বাসীর শান্তি সমৃদ্ধি এবং যুদ্ধ সংঘাত হানাহানি থেকে বৈশি^ক শান্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি