নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে সন্ধান পাওয়া গেছে টর্চার সেলের। এই টর্চার সেলে পর্যটকসহ অন্যদের অভিনব কায়দায় বন্দী করে আদায় করা হতো মুক্তিপণ। ট্যুরিস্ট পুলিশের এক অভিযানে এমনই এক টর্চার সেল থেকে বন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে পর্যটকসহ চারজনকে। এসময় গ্রেফতার করা হয়েছে সংঘবদ্ধ চক্রের ১১ সদস্যকে।
রোববার রাত ১১টা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এ অভিযান চালায় ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কটেজ থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে ইফাজ উদ্দিন ইমন (১৭), একই এলাকার বেলাল আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৫), টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে দীল মোহাম্মদ (১৭) এবং সাতকানিয়া উপজেলার ফয়েজ আহমেদের ছেলে মো. ইমরান (১৯)।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কলাতলীর কটেজ জোন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। তালা ভেঙে শিউলি কটেজে ঢুকলে সেখানে থাকা সংঘবদ্ধ অপরাধীরা বিকল্প একটি পথে পালিয়ে যায়। এসময় একটি কক্ষ থেকে জিম্মি অবস্থায় দুই পর্যটক ও দুই কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। একই সাথে ওই কক্ষ থেকে নির্যাতন করার নানা উপকরণও জব্দ করা হয়।
উদ্ধারকৃতদের তথ্যমতে, সেখানে ৫/৬ জন ছেলে ও ৩ জন নারী ছিল। দালালের মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে পৃথকভাবে তাদের ওই কটেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রবেশ করার পর টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে নারীদের সাথে নানা আপত্তিকর ছবি তোলা হয় এবং মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। আরও টাকার জন্য পরিবারকে জানাতে করা হয় নির্যাতন।
এরকম আরও কয়েকটি কটেজে জিম্মি করে নির্যাতনের তথ্য ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, অচিরেই অভিযান চালানো হবে।
কক্সবাজারে এমন আরও সাইনবোর্ড বিহীন ২০-৩০টি কটেজ আছে। সংঘবদ্ধ একটি দুর্বৃত্তচক্র এই কটেজগুলোকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দীল মোহাম্মদ ও ইমরান উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তারা রোববার সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য ‘শিউলি’ নামের কটেজে উঠে। বাকি দুজন শহরে চিকিৎসা করতে এসেছিলেন।
এ সময় দালাল সন্দেহে আটক করা হয়েছে মো. আলমগীর (৪৫), মো. সেলিম (২০), আকাশ দাস (২৩), মো. জোবায়ের (২৮), মো. মামুন (২২), নাজির হোসেন (২৮), সেকান্দর আলী (২৮), মো. সোহেল (৩০), মো. জাহাঙ্গীর আলম(৩৩), মো. জসিম (২৭) ও মো. পারভেজকে (২৫)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, কটেজটির মালিককে শনাক্ত করা না গেলেও পরিচালনায় থাকা মো. রহিম ও লোকমান নামের দুজনকে শনাক্ত করা গেছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি কক্ষ থেকে আটকে রাখা অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া দেশীয় অস্ত্র ও নানা যৌনসামগ্রী পাওয়া যায়।
পুলিশ জানায়, রোববার রাতে কক্সবাজার শহরের আবাসিক কটেজ জোনে কম ভাড়া কক্ষ খুঁজছিলেন তারা। এ সময় দালালরা তাদের এই কটেজে নিয়ে যায়।
এসব সাইনবোর্ড বিহীন কটেজ থেকে পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে রেজাউল করিম বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।