নিজস্ব প্রতিবেদক »
জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আসামির তালিকায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) ছেলে আহসানুল আলমও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটির চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১ বাদী হয়ে মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক ইয়াসির আরাফাত।
জানা যায়, দীর্ঘ তদন্তে দুদক দেখেছে, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা সবাই এই অবৈধ ঋণের সঙ্গে জড়িত এবং এর সুবিধাভোগী।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখা কার্যালয় ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরোয়ার চৌধুরীকে ৯৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়। ব্যাংকের ওই শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলার ছয় দিন পর এ ঋণ দেওয়া হয়। ব্যাংকের বিনিয়োগ কমিটি ঋণ প্রক্রিয়া তদন্ত না করেই ঋণ অনুমোদন করে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মুরাদ এন্টারপ্রাইজ যে বিনিয়োগের কথা বলে ঋণ নিয়েছিলেন তা না করে এস আলম তার বিভিন্ন ব্যবসায় ঋণ পরিশোধ করেছেন। এর মাধ্যমে তারা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন। এর আগে গত ২১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ওরফে এস আলমের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক।
মামলার আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তানভীর আহমদ, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ড. মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, ড. মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, সাবেক পরিচালক খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান, সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ।
অন্য আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, ব্যাংকটির বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাকতাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাকতাই শাখা প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী এবং দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।
ঋণগ্রহিতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আসামি- মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সওয়ার চৌধুরী, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মালিক মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং কর্পোরেশানের মালিক মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সে মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম চৌধরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, রেইনবো কর্পোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের এমডি মো. রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সর মালিক এম এ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউজের মালিক এরশাদ উদ্দিন, জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউজের মালিক ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের মালিক আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউজের মালিক মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউজের মালিক মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী এবং ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক কাজী মেজবাহ উদ্দিন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।