এবার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে ভুল

জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

ভূঁইয়া নজরুল »

এবার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে ভুল করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। ২০২১ সালে পাশ করা এইচএসসি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদানের জন্য ইতিমধ্যে ৪০ হাজার ট্রান্সক্রিপ্ট প্রিন্ট করা হয়েছে। কিন্তু তা স্বাক্ষরের পর শনাক্ত হলো সেখানে ভুল রয়েছে। এখন ভুল সংশোধন করে নতুন করে প্রিন্ট করতে যাচ্ছে বোর্ড। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে এই ভুল করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এর আগে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও ভুল করেছিল এবং সে ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছিল।

জানা গেছে, ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ৮৯ হাজার ৬২ জন পরীক্ষার্থী পাশ করেছিল। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরপরই তাদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট শিক্ষাবোর্ড থেকে সরবরাহ করা হয়। গত ১৫ থেকে ২০ দিন আগে থেকে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট প্রিন্ট করে আসছে শিক্ষাবোর্ড। প্রিন্টের পাশাপাশি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরের স্থলে স্বাক্ষর কার্যক্রমও অব্যাহত ছিল। কিন্তু সোমবার ২৮ মার্চ বিকেলে শনাক্ত হয় প্রিন্ট করা একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে ভুল রয়েছে। আর তখনই প্রিন্ট ও স্বাক্ষর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।

কি সেই ভুল?

একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের নিচে বাম পাশে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখের স্থলে লেখা রয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না হওয়ায় সীমিত সিলেবাসে গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভুলের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘আমি তো আজ (সোমবার) ছুটিতে। শুনেছি একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে ফলাফল প্রকাশের তারিখের ঘরে ভুল হয়েছে। তাই আবারো নতুন করে প্রিন্ট করা হবে।’

এদিকে এ ঘটনায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দায়ী করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল আলীম বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অমনোযোগিতার কারণে বোর্ড বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলো। ট্রান্সক্রিপ্টের কাগজগুলোর দামও বেশি।’

কিন্তু স্বাক্ষরের আগে কেন ভুল শনাক্ত হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায় ৪০ হাজার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ার পর ভুল চোখে পড়ে। এই ভুলের মধ্যেই স্বাক্ষর কার্যক্রম চলছিল।’

ভুল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে স্বাক্ষরের সময় কেন তা শনাক্ত করা যায়নি জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘আমি এখনো স্বাক্ষর করিনি। তবে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পক্ষে বোর্ডের অফিসার পদমর্যাদার ব্যক্তিরা স্বাক্ষর করতে পারেন।’

তবে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল আলীম। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি পরীক্ষা শাখার কাজ। এজন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে জবাব চাওয়া হবে।’ শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট প্রিন্টের আগে সেখানকার লেখা কি হবে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পর্যন্ত অনুমোদন থাকে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে গত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ থেকে অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। ফলাফল প্রকাশের দিন দুপুর ও সন্ধ্যায় দুই ধরনের ফলাফল পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ফলাফল নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। এ ঘটনায় শিক্ষাবোর্ড থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছিল। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়ার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।