ইতিহাসের গৌরব ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ চলচ্চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘এতদিন জানতাম আমাদের বোনেরা যুদ্ধে যেতে জানে না। কিন্ত তোমাদের সাহস ও দৃঢ়তা প্রমাণ করছে, তোমরা পারবে।’ নগরীর রহমতগঞ্জের যাত্রামোহন হলে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ চলচ্চিত্রে মাস্টার দা সূর্যসেনের সংলাপ এটি। তখন হলজুড়ে বিরাজ কাজ করছিল পিনপতন নীরবতা। পাহাড়তলীর ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের আগে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে এভাবেই উদ্বুদ্ধ করছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা মাস্টারদা সূর্য সেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে চলচ্চিত্রটি চলছে চট্টগ্রাম নগরীর সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স ও যাত্রামোহন হলে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেখা যাবে নগরীর সুগন্ধা সিনেমা হলেও। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়ে শীঘ্রই দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্রটি দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৯০ বছর আগের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের মতো নারীদের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্বদানের অদম্য সাহসিকতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একজন সাধারণ নারীর স¦াধীনতার সাধ ধীরে ধীরে কিভাবে স¦াধীনতালাভের প্রতিজ্ঞায় পরিণত হয় সেটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।
ছবিটি দেখা শেষে রীতা দত্ত নামে একজন দর্শক বলেন, ‘অসাধারণ একটি চলচ্চিত্র। প্রীতিলতা তো আমাদের কাছে কেবল একটি নামমাত্র তো নন, একটি প্রতিষ্ঠান তিনি। তিনি একজন নারী হিসেবে সেই সময় যে অদম্য সাহসের পরিচয় দিয়েছেন এবং সশস্ত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে যে আত্মাহুতি দিয়েছেন, সেটি তরুণপ্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। চলচ্চিত্রনির্মাতারা এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানা ও দেখার সুয়োগ করে দিয়েছেন, সেজন্য আমি নির্মাতা ও কলাকুশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ করছি। এ রকম ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র আরো হোক, আমি সেই প্রত্যাশা করি।’
রুমি চৌধুরী নামের আরেকজন বলেন, ‘সিনেমাতে শিল্পীরা দারুণ অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ইতিহাস অক্ষুণ্ন রেখে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে দেখে। ঐতিহাসিক স্থানগুলো যেমন ধলঘাট, পাহাড়তলীর ইউরোপীয়ান ক্লাব, আনোয়ারা, কাট্টলী ইত্যাদি স্থানে শুটিং করা হয়েছে। যার কারণে প্রীতিলতা তথা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে সেসব স্থানের সংশ্লিষ্টতার ইতিহাস যারা জানেন না তারাও সেই ইতিহাস জানতে পারবেন।’
চলচ্চিত্রটির অভিনেতা সজল চৌধুরী বলেন, ‘আসলে ৯০ বছর আগের ইতিহাস নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে হলে যে পরিমাণ বাজেটের প্রয়োজন, সেটি আমাদের ছিল না। তাছাড়া সেই সময়ের ‘কস্টিউম’ থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক জিনিসপত্র যোগাড় করাও কষ্টসাধ্য ছিল। সেই জায়গা থেকে সবার চেষ্টা ছিল সর্বোচ্চ দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করা। আমরা চেষ্টা করেছি। এবং দর্শকদের বিপুল সাড়া পাচ্ছি।’
চলচ্চিত্রটির পরিচালক প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘দেশের ১০টি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাচ্ছে। যে যাত্রামোহন হলে সিনেমাটি দেখানো হচ্ছে, সেটি একটি ব্রিটিশ স্থাপনা। আমরা চট্টগ্রামে প্রচারণা শুরু করি প্রীতিলতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে। সিনেমাটি পুরোপুরি বাস্তবিক স্থানিক চলচ্চিত্র। চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশকে প্রীতিলতার মতো মানুষদের কারণে সারাবিশ্ব বিশেষভাবে চেনে। আমাদের উচিত, সেই ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখা এবং নতুন প্রজন্মকে প্রীতিলতাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানো। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।’