জলাবদ্ধতা
ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে না এমন নিশ্চয়তা
দেওয়ার সময় আসেনি এখনও : প্রকল্প পরিচালক
চলতি বছরও জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থাকতে পারে : চসিক প্রধান প্রকৌশলী
ভূঁইয়া নজরুল »
নগরীর কোতোয়ালী মোড় থেকে পাথরঘাটা যাওয়ার সময় সেন্ট প্লাসিড স্কুলের আগে একটি ছোট ড্রেন ছিল। এখন উভয় পাশের ভবন ভেঙে ড্রেনকে চওড়া করার কাজ চলছে। এতে ড্রেনটি বন্ধ রাখতে হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বৃহস্পতিবার সড়কের উপরে পানি জমে ছিল।
গতকাল স্পটে গিয়ে দেখা গেছে, ড্রেনে রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে এবং পানি চলাচলের পথ বন্ধ রয়েছে। ছোট এ ড্রেনের মতো নগরীর অনেক ড্রেন ও খাল প্রায় বন্ধ রয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে নগরীতে জলাবদ্ধতার পুরনো চিত্র চোখ রাঙাচ্ছে।
সিডিএ এভিনিউ রোডের চশমা খাল হয়ে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, চশমা খালের মোড়ে রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ফলে ২৪ ফুট চওড়া খালের পানি বিকল্প চার ফুট চওড়া জায়গা দিয়ে অপসারণ করা হচ্ছে। অপরদিকে মুরাদপুর মোড় থেকে এন মোহাম্মদ পর্যন্ত পুরো এলাকার বেশিরভাগ জায়গা মাটি দিয়ে স্তূপ রয়েছে। পানি চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। পুরাতন চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা সড়কের পাশের খালে এখনো মাটির স্তূপ রয়েছে। তাহলে পানি নামবে কি করে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘এবার এপ্রিলে প্রাক্ বৃষ্টি হয়নি। তাই একটু সময় পাওয়ায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এই মাসের শেষ নাগাদ কাজ চালিয়ে যাবো এবং একইসাথে খালগুলোর মাটিও পরিষ্কার করে দিবো।’
কিন্তু খালে যদি পানি না আসে, ড্রেনগুলোতে যদি পানি আটকে থাকে। তাহলে কি এবারো নগরবাসী জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় মাত্র ৩৬টি খালে কাজ করছি ও ৫৪ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ করেছি। এগুলোর মধ্যে যদি পানি আটকে থাকে পরিষ্কার করে দেবো কিন্তু আরো ২১টি খাল ও ১৬০০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। সেগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।’
প্রকল্পের বাইরের ড্রেন ও খালে পানি আটকে থাকলে এর দায়ভার সিটি করপোরেশনের? এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘স্বাভাবিক। আমাদের প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার নিশ্চয়তা দেবো। পুরো শহরের দায়িত্ব তো আমার না। এছাড়া এবার খালগুলো থেকে পানিও দ্রুত নেমে যাবে। এজন্য ইতিমধ্যে কয়েকটি খালে স্লুইস গেট লাগানো হয়েছে এবং বাকিগুলোতে লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে। যেসব খালে স্ল্ইুস গেট থাকবে না সেগুলো ওপেন থাকবে এতে পানি নেমে যাবে।
জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালকের প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, ‘নগরীতে প্রধান খাল ৩৬টি। এগুলো পরিষ্কার থাকলে পানি এমনিতেই নেমে যাবে। তবে তাদের প্রকল্প এখনও শেষ না হওয়ায় অনেক খাল এখনো ব্লকড অবস্থায় রয়েছে। তাই ধারণা করছি এবারও জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না।’
কিন্তু ছোট ড্রেন ও প্রকল্পের বাহিরের খালগুলোর বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ড্রেনগুলোর কোথাও কোথাও জ্যাম হলে বৃষ্টির সময় পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। তবে প্রধান হলো খাল। খাল পরিষ্কার থাকলে পানি নেমে যাবেই।
ষোলশহর এলাকায় পানি জমবে না নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না
জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতাধীন নগরীর অন্য কোনো এলাকায় পানি জমবে না কিংবা জমলেও তা পরিষ্কার করে দেয়া যাবে। কিন্তু ষোলশহর এলাকায় পানি জমার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী। কেন সম্ভব নয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চশমা খাল থেকে এন মোহাম্মদ পর্যন্ত খালটি ৮ মিটার চওড়া হওয়ার কথা। কিন্তু ষোলশহর ভূমি অফিস থেকে ফরেস্ট গেট পর্যন্ত মাত্র ৪ মিটার চওড়া রয়েছে। এই অংশে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করা হয়নি বলে খালের চওড়া কম। এতে বৃষ্টির সময় ব্যাপক পানি নেমে যেতে সময় লাগতে পারে এবং জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। তাই এই অংশে নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না।’ কিন্তু প্রতিবছর এই অংশেই সবচেয়ে বেশি পানি জমে।
উল্লেখ্য, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপর সেনাবাহিনীর পরামর্শক নিয়োগ করে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। আর তা করতেই দুই বছর চলে যায়। এসময়ের মধ্যে শুধু খালগুলো পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একবছর বর্ধিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন করে ডিপিপি তৈরি করে প্রকল্পের মেয়াদ ও বাজেট বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবনা করা হয়েছে।