আরাভে খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ

সাংবাদিকদের আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক »

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘পুলিশ হত্যা মামলায় যে নামে চার্জশিট হয়েছে, সেই নামে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেটা ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে। এখন বাকি কাজ তারা করবে। আমরা কীভাবে কাজ করে যাচ্ছি সেটা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি না তদন্তের স্বার্থে।’

গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালী থানার এনায়েতবাজার পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এ পুলিশ ফাঁড়ি। এই ভবনের মোট আয়তন ১০ হাজার ১৮০ বর্গফুট।

আইজিপি আরও বলেন, ‘দেশ থেকে কোনো আসামি পলায়ন করে বিদেশে চলে গেলে তার সম্পর্কে মোটামুটি কিছু তথ্য পেলে আমরা রেড নোটিশ জারি করি। এটা ইন্টারপোল হেড কোয়ার্টারে যায়।’

আরাভ খানের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন সাবেক এক কর্মকর্তার সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজনের কথা আমরা শুনছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। উপযুক্ত সময়ে তা আপনাদের জানাব।’

আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে এক ঝাঁক তরুণের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা কী কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বিষয়টি তারা বলবেন। আমরা তদন্ত করে দেখবো। অনেক সময় দেখা যায় বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার জন্য যায়। একজন একটি অনুষ্ঠানে গেলেই প্রকৃত ঘটনার সাথে জড়িত বলে ধারণা করা যায় না। এরপরও আমরা এটা পর্যবেক্ষণ করছি।

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ঘটনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুটি পক্ষের বিরোধের বিষয়ে পুলিশের আইজিপি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিরোধের বিষয় সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আপনারা জানেন কক্সবাজারের জনসংখ্যা কত আর শুধু ক্যাম্পের জনসংখ্যা কত। এখানে জেলা পুলিশসহ সবাই মিলে দায়িত্ব পালন করছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। প্রত্যেকটি ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রতিটি ঘটনায় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে অপহরণ ও মুক্তিপণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার প্রতিটি ঘটনায় বিষয় আমরা ভালোভাবে তদন্ত করছি। ঘটনার শিকার ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করছি। একই সঙ্গে অপরাধের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

গত ১৫ মার্চ আরাভ খানের দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে যান জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নায়িকা দীঘি এবং ইউটিউবের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম। এরপরই আরাভ খানের বিষয়টি তুমুল আলোচনায় আসে। জানা যায়, আরাভ খান ঢাকায় পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তার প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম। পুলিশ মামলার আসামি হওয়ার পর পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে বস্তিতে থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে ‍দুবাই চলে যান। খবর বের হয়, সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দুবাই চলে যান আরাভ খান। অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়া আরাভ খানের সঙ্গে দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী, মডেল, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক রয়েছে বলে পুলিশের সূত্র ব্যবহার করে কয়েকটি গণমাধ্যম ইতোমধ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এরপর তিনি বিকালে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে সিএমপি আয়োজিত বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন। এতে সিএমপি কমিশনানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাহান চৌধুরী।