নিজস্ব প্রতিবেদক
সারাদেশে তীব্র শীতে জমে উঠেছে আমদানি হওয়া পুরাতন কাপড়ের বাজার নগরীর খাতুনগঞ্জের আমীর মার্কেট। রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, রংপুর, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছেন পুরাতন শীতবস্ত্র কিনতে এই মার্কেটে। গতবছর এলসি জটিলতায় কম কাপড় আমদানি হওয়ার কারণে শীতবস্ত্রের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ফলে দেশের চাহিদা অনুযায়ী পুরাতন এসব শীতবস্ত্রের যোগানের ঘাটতি আছেবলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে দাম নিয়ে বিপাকে স্বল্প আয়ের ক্রেতারাও। অন্যদিকে দেশে যদি আগামী একমাস তীব্র শীত থাকে তাহলে শীতকালীন পোষাকের সংকট হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক ব্যবসায়ী। এতে চলতি বছরে পুরাতন পোষাক আমদানিতে সরকার নির্ধারিত নীতিমালায় এলসি সংকট, লাইন্সেন্সের পরিমাণ কমানো ও পোষাক আমদানির পরিমাণ কমানোকে দুষছেন আমদানিকারকরা।
গতকাল সোমবার বিকালে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার নগরীর খাতুনগঞ্জের পুরাতন পোষাকের গুদামগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, আমদানিকারকরা তাদের আমদানি হওয়া পুরোনো কাপড়ের গাইট নিজস্ব গুদামে সাজিয়ে রেখেছেন। আর ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে বন্দরের বিভিন্ন গুদামে রাখা শীতের পোষাকের গাইট। প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই তাইওয়ান, কোরিয়া, চীন ও জাপান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা হয় এসব পুরাতন কাপড়ের গাইট। শীত যতদিন থাকে, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও ততদিন এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক শীত পড়ায় পুরাতন এই পোষাকের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে এলসি খোলা ও এলসিতে নির্ধারিত কৌটাকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা পরিবর্তন আনাতেই আমদানিকারকরা কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
চলমান এলসি সংকট ও পুরাতন পোষাক আমদানি বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুরাতন কাপড় স্থায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি আবুল কালাম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আমদানি বন্ধ থাকার পর গতবছর যে এলসি করছিল আমদানিকরা তার মালামাল গুদামজাতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। বর্তমান দেশে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারেনি। তবে চলতি বছর আমদানির উপর সরকার যে নীতিমালা প্রণয়ন করাতে কিছু ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পেরেছে, মালামাল আসতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে।’
তবেচলতি বছরে পুরাতন পোষাক আমদানি সরকারের নির্ধারিত কৌটাতে দেশের যোগান অনুযায়ী পর্যাপ্ত না বলে মনে করেন এই আমদানিকারক।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর সারাদেশে প্রতি লাইসেন্সে ৫০ হাজার টাকা করে ৫ হাজার লাইসেন্সে ২৫ কোটি টাকার পোষাক আমদানি করা যেত। যেখানে প্রতি লাইসেন্সে ৬ টন করে মালামাল আনা যেতো। কিন্তু চলতি বছর থেকে তা কমিয়ে ৩ হাজার লাইসেন্স ও ৩ টন করে ১৫ কোটি টাকার পোষাক আমদানি করার সুযোগ পাচ্ছি। এতে একই পরিবহন খরচে আমাদের পোষাকগুলো বেশি পরিমাণ আনতে পারছি না। তার মধ্যে ব্যাংকের ডলার সংকটে কিছু কিছু ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারছে না। সুতরাং যদি তীব্র শীত পড়ে, এলসি সংকট, লাইসেন্স কমানো ও পোষাকের আমদানির পরিমাণ কমানো- এ তিন কারণে পুরাতন পোষাক, কম্বলসহ নানা কাপড়ের সংকট পড়তে পারে।’
পুরাতন পোষাক আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম জলিল সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সারাবছরে একবার আমদানি হয় এই পুরাতন পোষাকখাতে। তিনবছর আগে ২৫ কোটি টাকার পোষাক আমদানি করা গেলেও এখন তা করা যাচ্ছে না। আমাদের বেশি দামে মালামাল ক্রয় করতে হচ্ছে। তবে এখনও গুদামে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ পোষাক রয়েছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতিতে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।।’
পুরাতন কাপড় আমদানিকারক মেসার্স ফারুক অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক কাজী জাকির হোসেন আনিছ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘পুরাতন পোষাক আমদানিতে সরকারের বর্তমান কোটা পদ্ধতি নিয়ে আমরা সরকারের কাছে বিভিন্নভাবে আবেদন জানিয়েছি। মন্ত্রণালয়েরবরাতে আমরা জানতে পারি এ পদ্ধতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আমরা পূর্বের নীতিমালা চাচ্ছি। লাইসেন্সে ৩ হাজারের স্থানে যদি আগের মতো ৫ হাজার চাই। তাহলেদেশের বিভিন্ন স্থানের গরীব, অসহায়, দরিদ্র মানুষরা শীত নিবারনের জন্য কম খরছে ব্যবহার করতে পারতো।’