আধুনিকায়নের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরে

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিমানবন্দর সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচেক)। চলতি বছরের শেষ নাগাদ অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরেই শেষ হবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আটটি বিমান বন্দরের উন্নয়ন তথা আধুনিকায়নের কাজ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আটটি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ চলতি বছরের শেষ নাগাদ সমাপ্ত হবে।

কাজের মান ও অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে। ইকুইপমেন্ট ও নিরাপত্তা সামগ্রীর মান ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড মেনে করা হয়েছে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, কার্গো ওয়ারহাউস নির্মাণ, প্যারালাল ট্যাক্সিওয়ে, হাই-স্পিড টেক্সিওয়ে, টার্মাক সম্প্রসারণ কাজ এগিয়ে চলছে।

বন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ ও বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে ফুল লোডেড বোয়িং ৭৭৭ বিমান রানওয়েতে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের শক্তি (পিসিএন) ৬৬ থেকে ৯১-তে উন্নীত হবে বলে বেবিচক সূত্রে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে বডি স্ক্যানার। এছাড়া, এবছরের ডিসেম্বর নাগাদ বিমানবন্দরে একটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, কানেক্টিং করিডোর ও ডিপার্চার লাউঞ্জ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মাক এক্সটেনশন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এখানে নতুন দুটি বিমান রাখার ব্যবস্থা হবে। বর্তমানে এ বিমানবন্দরে ১০টি বিমান টার্মাকে অবস্থান করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ সুপ্রভাতকে বলেন, বর্তমান ১৩টি উড়োজাহাজ পার্কিং করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজও চলমান রয়েছে। এখন ড্রেনেজ ও লাইটিংয়ের কাজ চলছে। মাস দুয়েকের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। রানওয়ে সম্প্রসারণ ও পার্কিংয়ের কাজটি শেষ করে ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হবে।

তবে চট্টগ্রামের এ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যাতায়াতের সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় এ অঞ্চলের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বর্তমানে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যাতায়াতকারীদের রাজধানী ঢাকা হয়ে যেতে হয়। এতে যাত্রীদের সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে এই বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন রুটে ফ্লাইট চালু করার দাবি জানিয়েছে আসছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্যাংকক ও চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সর্বশেষ গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে চিঠি দিয়েছেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তৎকালীন সভাপতি এবং বর্তমানে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছয়টি বিদেশি ও দুটি দেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম-দুবাই রুটে ফ্লাই দুবাই, চট্টগ্রাম শারজাহ ও আবুধাবি রুটে এয়ার আরাবিয়া, চট্টগ্রাম-কুয়েত রুটে জাজিরা এয়ার ওয়েজ, চট্টগ্রাম-মাস্কাট রুটে ওমান এয়ার ও সালাম এয়ার এবং চট্টগ্রাম কলকাতা রুটে স্পাইস জেট। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান জেদ্দা, দুবাই, ওমান, শারজাহ ও ইউএস বাংলা মাস্কাট ও দোহা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১২টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের আগমন ও বহির্গমন হয়। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটে ১৫ থেকে ১৭টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়।

১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর তৈরি হয়। তখন এর নাম ছিল চট্টগ্রাম এয়ারফিল্ড। পরে ১৯৭৭-৭৮ সালে বিমান ওঠানামার জন্য তিন হাজার ৪৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭৪২ মিটার প্রস্থের রানওয়ে তৈরি করা হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বিমানবন্দরের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। পরে টামির্নাল ভবনসহ বিভিন্ন অংশ সংস্কার করে ব্যবহারযোগ্য করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাপান সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮ সালের ১২ মার্চ উন্নয়নকাজ শুরু হয় এবং তা শেষ হয় ২০০০ সালে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) ২০১৩ সালের নভেম্বরে শাহ আমানত বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি দেয়।