শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
দেশীয় অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনায় গতি এসেছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৯ সালের মধ্যে ২৩২ কিলোমিটার মহাসড়কের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনায় মহাসড়কটি আট লেনের পাশাপাশি কয়েকটি ওভারপাস ও সড়কের বেশ কিছু অংশ সোজা করার কাজও করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ৭৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আগামী মার্চে এ মহাসড়কের নকশা ও সমীক্ষার কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেটের দূরত্ব ২৩২ কিলোমিটার। পৃথক তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে মহাসড়কটি। তবে পুরো মহাসড়ক আট লেনের হবে না। যানবাহন চলাচলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি অংশ ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পের প্রথম অংশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের তিনটি জেলার সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার। যা বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অংশে কুমিল্লা ও ফেনীর দুটি জেলার সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। যা বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। তৃতীয় অংশ বাস্তবায়িত হবে ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ৬৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা জোগান দেবে সরকার। ২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) জাকির হোসেন বলেন, ‘তিনটি প্রকল্প নেয়ার কারণ, এত বড় প্রকল্প একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা কঠিন। তাছাড়া এত বিপুল পরিমাণ অর্থ একসঙ্গে কেউই দিতে রাজি হবে না। সে কারণে কাজ ভাগ করা হয়েছে। নিয়ম মেনে এই তিনটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশন থেকে এখন তিনটি প্রকল্প ইআরডিতে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) পাঠানো হবে। কোন কোন দেশ ও সংস্থা এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করবে তা খোঁজ করবে ইআরডি।’
পরামর্শক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহাসড়কটি আটলেনে উন্নীত করতে বিস্তারিত নকশা ও সমীক্ষা প্রয়োজন। এ দুটি কাজ করতে গত বছর পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে দরপত্রে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী মার্চের মধ্যে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাবটি অনুমোদনের কথা রয়েছে। এরপর নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। চুক্তির পর ১৮ মাসের মধ্যে বিস্তারিত নকশা ও সমীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ দুই কাজে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।’
জানা গেছে, নতুন প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লার গৌরীপুরসহ যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেসব স্থানে ওভারপাস করে দেয়া হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। ফলে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করতে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করতে কথা হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাব্বির হাসান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম আট লেনের মহাসড়কটির কোন কোন এলাকা ছয় লেনের হবে তা সমীক্ষায় নির্ধারণ করা হবে। এটি নির্ধারিত হবে যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে। এছাড়া কোথায় কোথায় ওভারপাস হবে, সড়কের কোন কোন অংশ সোজা করতে হবে এসব সমীক্ষায় থাকবে। সমীক্ষার কাজ চলাকালীন বিদেশি অর্থায়ন খোঁজা হবে। এরমধ্যে এডিবি মহাসড়ক প্রশস্তকরণে আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করছি ২০২৩ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাবে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন বাড়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু স্থানে যানজট হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরা এটিকে আট লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছে। আট লেনের মহাসড়কের অগ্রগতি প্রসঙ্গে কথা হয় দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। বর্তমানে যাত্রীবাহী গাড়িতো বেড়েছে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের বেশি ট্রাক এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। ফলে চারলেন দিয়ে এখন চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। যানজটের কারণে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন সড়কটি আটলেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছি। আট লেনে উন্নীত হওয়ার কাজে গতি আসায় আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ মহাড়কটি আট লেনের হলে যানজট ও খরচ কমে যাবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে এ মহাসড়ক সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাতিল করে করে চার লেনবিশিষ্ট মহাসড়কটি প্রশস্তকরণ ও উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের খরচ অনেক বেশি হওয়া ছাড়াও এ সড়কের সুবিধা ভোগ করতে পারবে না সাধারণ মানুষ। তাই সড়ক ও জনপথ বিভাগের এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সরে আসে সরকার।