‘আগন্তুক’ : তরুণ আইনজীবীর জীবনসংগ্রাম ও প্রেমের গল্প

হুমাইরা তাজরিন »
বইমেলার দ্বিতীয় দিনে সাড়া ফেলেছে কাজী শরীফুল ইসলামের উপন্যাস ‘আগন্তুক’। ঢাকা বইমেলায় পর চট্টগ্রামেও পাঠকের ভালোবাসা কুড়াচ্ছে বইটি। ইতোমধ্যে বইটি দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হয়েছে।
গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় চলমান বইমেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনীর স্টলে ভিড় জমিয়েছেন পাঠকেরা। প্রায় সবার হাতেই ‘আগন্তুক’ শিরোনামের বইটি। ভিড় ঠেলে চোখে পড়লো স্টলে উপস্থিত রয়েছেন বইটির লেখক কাজী শরীফুল ইসলাম। সদ্য কেনা বইতে তার অটোগ্রাফ নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ ছবি তুলছেন লেখকের সঙ্গে। সকলের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস।
লেখক কাজী শরীফুল ইসলামের প্রথম বই ‘আবেগ গলির দৃশ্যগুলি’ প্রকাশ পায় ২০১০ সালে বলাকা প্রকাশনী থেকে। এরপর করোনা সময়টাতে লেখেন ‘কিংবদন্তী বিচারকদের যাপিত জীবন’। এরপর প্রকাশ পায় ছোটগল্পের বই ‘নিছক গল্প নয়’। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত তাঁর বইয়ের নাম ‘অবশেষে মানুষ একা’।
বইটি কেনার সময় কথা হয় এক পাঠকের সঙ্গে। পাঠক মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘বইটির প্রথম দিকটা পড়ে মনে হলো আইনের ছাত্র হিসেবে আমাদেরও বইটি পড়া উচিত। প্রচ্ছদেও আইনজীবীর পোশাক পরিহিত একজনকে দেখা যাচ্ছে। আইনজীবী ছাড়াও চরিত্রগুলোতে পুরো জীবনের একটা বড় অংশ ধরা পড়বে। যেখানে সবকিছুই থাকবে বলে মনে হচ্ছে। নতুন লেখকদের মধ্যে এই বইটা আমার কাছে ভালো লাগলো।’
লেখক কাজী শরীফুল ইসলাম বলেন ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে সকলের ইচ্ছে থাকে যে, আমরা আদালত পাড়ায় যাবো। আইনজীবী হবো। সে অনুযায়ী আমারও স্বপ্ন ছিল আমি আইনজীবী হবো। আইনজীবী হওয়ার আগে-পরে সময়টা বড়ই কষ্টকর। আমাদের এখানে প্রচলিত প্রথাটাই এমন যে, শুরুর দিকের পাঁচ-সাত বছর প্রচুর কষ্ট করতে হয়। তারপর আমাদের সিনিয়রেরা যে সম্মানীটা প্রদান করে, সেটাও খুবই নগণ্য। আমি কাউকে কষ্ট দিতে এ কথা বলছি না। এটাই হয়তো আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়ম। আমি আসলে ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার পক্ষে এই প্রেসারটা নেওয়া সম্ভব ছিল না। যার কারণে আইন পেশায় আমি নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারিনি। আমি শিক্ষকতার পেশায় চলে যাই। শিক্ষকতায় থেকেই পাঁচ-পাঁচবার জুডিশিয়াল পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি বিচারক হই। এখন আমি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। আমি যেটা অর্জন করতে পারিনি অর্থাৎ আমার আইনজীবী হওয়ার যে সাধ পূরণ হয়নি, এখন আমার মতো সেই তরুণ আইনজীবীরাই আমার সামনে বসে। আমি লালসালু মোড়ানো একটা জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত প্রদান করি। আমার খুব আনন্দ লাগে। আমি মনে করি, যারা তরুণ আইনজীবী, তাদের জীবনে প্রচুর স্ট্রাগল আছে। প্রেম ও প্রেমভঙ্গের কষ্ট আছে। পাওয়া না পাওয়ার একধরনের দোলাচলও আছে তাদের জীবনে। তাদেরও তো পরিবারের প্রত্যাশা থাকে, অনেক সময় সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার কষ্ট থাকে তাদের অন্তরে। এই বিষয়গুলোকে উপজীব্য করে আমি উপন্যাসটা লিখেছি। আমার জীবনের ছায়া থাকলেও এটা ঠিক আত্মজৈবনিক গল্প নয়। আমি এখানে জীবনের ইতিবাচক-নেতিবাচক সব কিছুকেই ধরতে চেষ্টা করেছি। তাই আমার বইটি সম্পর্কে বলবো, এটি আসলে একজন তরুণ আইনজীবীর জীবন সংগ্রাম ও প্রেমের গল্প।’