ডেঙ্গু, নতুন শনাক্ত ৭৪, দুজনের মৃত্যু
‘বিভিন্ন এলাকার ড্রেনে পানি
জমে আছে, সেখানেও তো
মশা জন্ম নিচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি মাসের শুরু থেকে জ্যামিত্যিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আক্রান্তের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হলেও পরবর্তীতে জুনের আগে কারও মৃত্যু হয়নি। জুন থেকে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের তথ্যসূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে জানুয়ারিতে ৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। এসময় ৭ মাসের শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন ও মে মাসে ৫৩ জন। এ সময় কারো মৃত্যু হয়নি। জুনে ২৮৩ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যান ৬ জন। সবমিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৬৫ জন আক্রান্ত ও ৯ জনের মৃত্যু হয়। চলতি মাসের ১৬ দিনে (১৬ জুলাই পর্যন্ত) আক্রান্ত হয় ৯১২ জন, যা গত ছয় মাস আক্রান্তের প্রায় দ্বিগুণ। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
আক্রান্ত ব্যক্তির অবেহেলা মৃত্যুর কারণ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। অন্যদিকে ডেঙ্গু প্রতিকারে জনসচেতনতার বিকল্প না থাকলেও নগরের দায়িত্বশীল সংস্থার অবহেলায় ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘সর্বশেষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ জন। মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। শেষ ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হাসপাতালে ৩৮ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৩৫৬ জন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু পজেটিভ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।’
ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঠেকাতে করণীয় জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব মাসুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু পজেটিভ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাসায় বিশ্রামের পাশাপাশি ডাবের পানি, লেবুর শরবত, খাবার স্যালাইন ও যে কোনো ফলের জুস খেতে পারেন। ওষুধের মধ্যে শুধু প্যারাসিটামল খেতে পারবে। ভুল করেও অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এসব ওষুধ খেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নগরের দায়িত্বশীল সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ড্রোন উড়িয়ে মশার প্রজননস্থান চিহ্নিত, মশক নিধনে ওষুধ ছিটানোসহ সচেতন না হওয়া ব্যক্তিদের জরিমানা করছে। এসবের পাশাপাশি সংস্থাটিকে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাবার তাগিদ দেন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘জবাবদিহিতা না থাকায় সিটি করপোরেশন নগরের অন্যতম দায়িত্বশীল সংস্থা হয়েও তাদের মূল কাজ করছে না। তাদের মূল কাজ হলো নগরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। কিন্তু তারা সেই কাজে অবহেলা করছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর তারা ওষুধ ছিটাচ্ছে, বিভিন্ন স্থানে অভিযান করে জরিমানা করছে। অথচ নগরের বিভিন্ন এলাকার ড্রেনে পানি জমে আছে। সেখানেও তো মশা জন্ম নিচ্ছে। ড্রেনগুলো তো তাদের পরিষ্কার করা দরকার।’
প্রসঙ্গত, ১ জুলাইয়ে ৩৬ জন, ২ জুলাইয়ে ৫৫ জন, ৩ জুলাইয়ে ২৪ জন, ৪ জুলাইয়ে ৩৩ জন, ৫ জুলাইয়ে ৪৮ জন, ৬ জুলাইয়ে ২৬ জন, ৭ জুলাইয়ে ৩৪ জন, ৮ জুলাইয়ে ২৭ জন, ৯ জুলাইয়ে ১১১ জন, ১০ জুলাইয়ে ৮১ জন, ১১ জুলাইয়ে ৭৪ জন, ১২ জুলাইয়ে ৯৯ জন, ১৩ জুলাইয়ে ৫২ জন, ১৪ জুলাইয়ে ৪৮ জন, ১৫ জুলাইয়ে ৯০ জন ও ১৬ জুলাইয়ে ৭৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
এরমধ্যে ১ জুলাই রুবেল (২৮), ৩ জুলাই মো. মাহেদুল (৩৫), ৪ জুলাই শ্রাবন্তী সরকার (১১), ৬ জুলাই মো. আনাস (১৬), ১৩ জুলাই মরিয়ম জান্নাত (২ বছর ৬ মাস) এবং ১৬ জুলাই মো. আলমগীর (৩০) ও মো. আব্দুল মান্নানের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে।