বিক্ষোভ সমাবেশে শামসুজ্জামান দুদু
‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তারা ভাবতেই পারে না ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তারা ভাবে এটা মনে হয় তাদের জন্মগত অধিকার। আওয়ামী লীগ সব ছাড়তে রাজি কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। না হলে আপনাদের পরিণতিও ভাল হবে না।’
গতকাল শনিবার বিকালে নগরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে ‘দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে’ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উদাহরণ টেনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে, কুমিল্লায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে এবং ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীনের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদ জানানো হয় এ সমাবেশ থেকে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন ‘যারাই আওয়ামী লীগ করেছে; তারাই বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে’ অর্থাৎ দলের সবাই চোর সেটা তিনি স্বীকার করেছেন। তবে টাকা যেখানেই পাচার হোক বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। দেশের টাকা আকাশে যাক, আর সাগরে ভাসুক, সেই টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আওয়ামী লীগ টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। ব্যবসায়ীদের এখন দশ নয় তাদের ১০০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়।
বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না মন্তব্য করে দুদু বলেন, ১৩ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতন করেছেন। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দিয়েছেন। তবে বিএনপি শহীদ জিয়ার দল। প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। ভোট দেওয়ার অধিকার চাই, গণতন্ত্র ও গণনির্বাচন চাই। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। নেত্রীকে মুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। তিনি আসলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে। পুলিশের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের পুলিশ সুনামের সঙ্গে কাজ করেছে। এই ৫০ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। পুলিশকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা পুলিশকে ডাকাতের দলে পরিণত করেছে। আমেরিকা তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পুলিশ এখন দুবাইও যেতে পারে না, ভারতেও মনে হয় যেতে দেবে না।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজারের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে করুণ দুর্দশা, শুধু তেলের দাম বাড়ছে তা নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগের অধীন কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন ভাগাভাগির পরিকল্পনা করছে সরকার।
সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জনগণের মনে যে ক্ষোভ সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে শ্রীলংকায়। রাজাপাকসের পরিবারের দমন পীড়ন ও লুটের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে সেখানকার মানুষ। তেমনই হবে বাংলাদেশের অবস্থা।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বর্তমান সরকার তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ চাইলেও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের সভা সমাবেশ ও নেতৃবৃন্দের ওপর হামলায় সরকারের স্ববিরোধীতাই ফুটে উঠে।
সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, গণতন্ত্রকে বিলীন করে আইনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা সমগ্র দেশটাকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে।
নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম ও ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের যৌথ পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মিয়া ভোলা, সৈয়দ আজম উদ্দীন, নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, নুরুল আমিন, নুর মোহাম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাউদ্দীন, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের শেখ নুরুল্লাহ বাহার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য লায়ন হেলাল উদ্দীন, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহিলাদলের ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী, নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি