এন এ জাকির, বান্দরবান »
দীর্ঘ চার বছরেও স্থানান্তর করা হয়নি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কোনার পাড়া এলাকায় নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের। গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সাপমারা ঝিরি, ফুলতলি, আষাড়তলিসহ তুমব্রু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডের বিভিন্ন পয়েন্টে আশ্রয় নেয় প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তবে সরকার পার্বত্য অঞ্চলে রোহিঙ্গা না রাখার সিদ্ধান্তে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাকে উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে স্থানান্তর করলেও তুমব্রু সীমান্তের কোনার পাড়া এলাকার নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রিত প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গাকে সরানো হয়নি। দীর্ঘদিন অবস্থান করায় এসব রোহিঙ্গা স্থানীয়দের সাথে মিশে গিয়ে দেশে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়ে অবৈধ পন্থায় স্থায়ী হচ্ছেন। এদের অনেকে আবার জড়িয়ে পড়ছে মাদক চোরাকারবারি, গুম, খুনসহ বিভিন্ন অপকর্মে।
গত কয়েক মাসে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচারকালে আটক হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কোনার পাড়ার প্রায় ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা। স্থানীয়দের অভিযোগ, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের সাথে আঁতাত করে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী। অনেকে আবার বৈবাহিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে ঐ এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দাও হয়ে গেছে। স্থায়ী হয়ে যাওয়ায় তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ওই এলাকার প্রকৃত স্থায়ী বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা ফখর উদ্দির ও নুর মোহাম্মদ জানান, তুমব্রু এলাকায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা স্থানীয়রা অসহায় হয়ে পড়েছি। তাদের কারণে আমরা কাজ-কর্মে যেতে পারি না। আশ্রিত রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি তাদের সাথে মিশে আমাদের ছেলে-মেয়েরাও খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই তুমব্রু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত সরকারি রোহিঙ্গা শিবিরে সরিয়ে নেয়া দরকার।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন- উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড এখনো ৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। এসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন মাদক চোরাচালানসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করেছে। এমনকি তাদের সাথে মিশে এলাকার স্থানীয় অনেকে লোক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এদের কারণে স্থানীয় মানুষ কাজে কর্মে পাহাড়ে যেতে পারে না। তাদের এহেন কার্যকলাপ ও অত্যাচারে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদেরকে সরিয়ে নেয়ার জন্য আমি বিভিন্ন জায়গায় আবেদনও করেছি। কিন্তু তাদেরকে এখনো সরিয়ে নেয়া হয়নি। তাই তুমব্রু সীমান্তে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই।