অবিলম্বে শিশুপার্ক নামের জঞ্জাল সরান

চট্টগ্রামে যে পুরনো সার্কিট হাউসটি আছে সেটি বাংলাদেশের একটি অনন্য স্থাপত্য। এর সামনের খোলা সবুজ চত্বরটিও ছিল ঐতিহ্যের একটি অংশ। দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার যখন সূচনা হয়, তখন এই চত্বরে নির্মিত হয়েছিল বিজয় মঞ্চ। সেই মঞ্চে সারাদেশ থেকে আসা রণাঙ্গনের বীর যোদ্ধারা প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতেন।
১৯৯১ সালে তৎকালিন সরকার স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ইন্ধনে বিজয় মঞ্চের আলোচনা বন্ধ করার জন্য এই সবুজ চত্বরে একটা শিশু পার্ক গড়ে তোলে। এই জায়গা সেনাবাহিনীর। ২৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে শিশুপার্ক গড়ে তোলে সিটি করপোরেশন, যেটি বেসরকারি খাতে পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়। শুধু বিজয় মঞ্চের আলোচনা বন্ধ করার জন্য শিশুপার্কের নামে এই জঞ্জাল বানানো হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এই শিশু পার্ক সরাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে আহ্বান জানাব এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি চিঠি দিব। প্রতিরক্ষা সচিবের কাছে চিঠি দিব। এই বিষফোঁড়াকে দয়া করে এখান থেকে সরাতে হবে।
সিআরবিতে হাসপাতাল না করার বিষয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের যে আবেগ, সেটাকে বিবেচনা করে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। নগরীতে উন্মুক্ত পরিসর থাকা দরকার। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকা খুব জরুরি। নগরীর বাসিন্দাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটাচলা করার মতো উন্মুক্ত স্থান হিসেবে এটি বিবেচনায় আসে সবার আগে।
সিটি করপোরেশনের আগ্রহে ১৯৯২ সালে ১৩ জুলাই তিন একর জমিতে শিশুপার্ক স্থাপনে নগর সংস্থাটিকে অনাপত্তি দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ১৯৯৪ সালে ঢাকার প্রতিষ্ঠান ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেডকে ২৫ বছরের জন্য জমিটি প্রথমবার ইজারা দিয়েছিল চসিক। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওই ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আবার ১৫ বছরের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সাথে পার্কের জমিটির ইজারা চুক্তি নবায়ন করে নগর সংস্থা। এই পার্ক থেকে মাত্র ১২ হাজার টাকা মাসে পায় সিটি করপোরেশন।
সবুজ উদ্যানটিকে আবারও ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষা উপমন্ত্রীর উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। শিশুপার্কের নামে এই জঞ্জাল সরিয়ে নিয়ে একটু সবুজ নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেয়ার আর্তি নগরবাসীর দীর্ঘদিনের।