শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
চলছে শরৎ। বৃষ্টি-বাদল ছাড়াই প্রখর রোদে রাস্তায় পানি ওঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলজট। ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারী। ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। এই জলজটের অন্যতম কারণ হলো ড্রেনে জমে থাকা আবর্জনা। এই আবর্জনায় নগরে বেশ কয়েকটি জলজটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেয়র আবর্জনা অপসারণের আদেশ দেন। কিন্তু আদেশ থাকার পরও সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ দেখছে না নগরবাসী।
ঘটনা প্রবাহে জানা যায়, ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় বৃষ্টি-বাদল ছাড়াই জিইসি মোড় এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পুরোদিন কাজ করার পর চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা আবিষ্কার করেন, সরু নালার ভেতরে অন্য সেবা সংস্থার পাইপ লাইনে আবর্জনা আটকে যাওয়ায় রাস্তায় পানি ওঠছে। একইরকম ঘটনা আলমাস সিনেমা হলের সামনে রেবতি মোহন লেইন দেখা যায় ৯ অক্টোবর রাতে। একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেজ ক্যাম্প থেকে বের হওয়া পলি বর্জ্য ড্রেনে জমে পানি ওঠে যায় রাস্তায়। আবার ১২ অক্টোবর রাতে রাস্তায় পানি ওঠতে দেখা যায় ইউনেস্কো সিটি সেন্টারের দক্ষিণে।
এ নিয়ে জিইসি কনভেনশন এলাকার সাইফুল নামের এক দোকানি বলেন, ‘এখানে যে স্ল্যাবগুলো ড্রেনের উপর বসিয়েছে, ওগুলো কবে তুলে পরিষ্কার করা হয়েছে সেটা কেউ জানে না। এক জায়গায় বছরের পর বছর ধরে ময়লা জমতে থাকলে এ অবস্থাতো হবেই। গত মাসে এতো পানি উঠলো। মানুষ রাস্তায় নেমে বিপদে পড়ে গেলো। এরপরও একবারের জন্য সবগুলো স্ল্যাবগুলো তুলে পুরো ড্রেনটা পরিষ্কার করা হয়নি।’
জানা যায়, নালা – খালের মাটি ও আবর্জনা তুলতে চলতি বছরের এপ্রিলে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পে ৫টি স্কেভেটর দিয়ে কাজ কাজ করার কথা। আর যেসব জায়গায় স্কেভেটর দিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়, সেখানে মানুষের সাহায্যে কাজ করার কথা। কিন্তু পরবর্তীতে এ কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে প্রকল্পটিকে ওয়ার্ডভিত্তিক করে ভাগ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রকল্পটিও শেষ পর্যায়ে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বৃষ্টি ছাড়া নগরীর অন্য কোনো রাস্তায় পানি ওঠার ঘটনা ঘটেনি। তবে অধিকাংশ জায়গায় ড্রেনের স্ল্যাবগুলো স্থায়ী করা হয়েছে। তাই স্ল্যাব তুলে ড্রেনের আবর্জনা না তোলা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ প্রসঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কের জয়নাব কলোনি এলাকার বাসিন্দা রুমন বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে এখানে থাকছি। এ তিন বছরে স্ল্যাব তুলে ময়লা পরিষ্কার করতে কখনো দেখিনি। তাই জোয়ারের সময় আমাদের খুব কষ্টে পড়তে হয়। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে এখানে এক বুক পানি জমে যায়। পানি তো পরে সরে যায়। কিন্তু যতক্ষণ না সরে ততক্ষণ তো এখানে নিচতলার লোকজন ঘরে থাকতে পারে না।’
চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরীতে প্রতিদিন তিন হাজার টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। এরমধ্যে মাত্র দুই হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করতে পারে সংস্থাটি। বাকি এক হাজার টন বর্জ্য ড্রেন ও খালে ফেলা হয়।
এ নিয়ে কথা হলে চসিক সচিব খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘স্ল্যাব থাকা ড্রেনের মুখে নেট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। তবে এটা ব্যাপক আকারে করার আগে পরীক্ষামূলক কিছু জায়গায় বসাতে হবে। তবে তার আগে স্ল্যাবের নিচে আবর্জনা ও মাটি জমে থাকলে তা পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
এ কাজগুলো কবে করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জিইসি মোড় এলাকায় পানি ওঠার পরে মেয়র মহোদয় প্রকৌশল বিভাগকে স্ল্যাবের নিচের ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করার কথা বলেছেন। পরিচ্ছন্নতা বিভাগ নিয়মিত কাজগুলো করবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা কাজগুলো করার জন্য প্রকৌশল বিভাগকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।’
নগরের কোথাও স্ল্যাব তুলে আবর্জনা অপসারণ করা হচ্ছে কিনা ফোনকলে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ড্রেন-নালা থেকে ময়লা, আবর্জনা ও মাটি অপসারণের একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আর আবর্জনা অপসারণের মূল কাজটা আমাদের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ করে। কোনো প্রকল্পের কাজ থাকলে সেটা আমরা করি।’
স্ল্যাব তুলে আবর্জনা অপসারণে মেয়রের আদেশের কথা বললে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প হিসেবে কোনো কাজ হলে আমরা সেটা করি। এছাড়া কাউন্সিলররা যদি এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রেও আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করি।’
সম্প্রতি কোনো এলাকায় স্ল্যাব তুলে আবর্জনা অপসারণের কাজ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলেই কলটি কেটে দেন।