বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া »
দীর্ঘ ১৪ বছর পর পটিয়া উপজেলার কালারপোল অহিদিয়া আখরুজ্জামান চৌধুরী বাবু সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এলাকাবাসীরস্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এদিন সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। পটিয়া কালারপোল সেতু নিয়ে ৫ মিনিটের একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনীর কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর শতভাগ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নির্মিত পটিয়াসহ সারাদেশের ১০১টি সেতুর মধ্যে পটিয়া কালারপোল সেতুটি অন্যতম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিকলবাহা খালের উপররয়েছে পটিয়া কালারপোল অহিদিয়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সেতু। খালের পশ্চিম পাড়ে কর্ণফুলী উপজেলা ও পূর্ব পাড়ে পটিয়া উপজেলা। দুই উপজেলার মানুষ ছাড়াও পাশর্^বর্তী বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করা হবে।
পাকিস্তান আমলে সেতুটি কংক্রিটের ছিল। ২০০৭ সালে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সেতুটি খালে পড়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অর্থে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করলেও ২০১৫ সালে তা পুনরায় ভেঙে যায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ব্রিজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে রানা বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালারপুল সেতুর টেন্ডার গ্রহণ করে। সওজ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয়।প্রায় ১৮০ দশমিক ৩৭৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের এ সেতুর উভয় পাশে ৫৫০ মিটার সংযোগ সড়ক ইতোমধ্যে নির্মাণ হয়েছে। সেতুটিবাংলাদেশ সরকারের ২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়নির্মাণ করা হয়েছে।
সেতু এলাকায় রয়েছে শিকলবাহা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পোশাক শিল্প কারখানা, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেতুটি পূর্বাংশ কর্ণফুলী টানেলে সংযোগ সড়কে, পশ্চিমাংশ মইজ্জারটেক হয়ে চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে এবং মইজ্জারটেক-বোয়ালখালী-কানুনগোপাড়া সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, কালারপোল সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলেও স্থানীয়দের মধ্যে এখনো নানা ধরনের ভয়ভীতি কাজ করছে। খালের ওয়াটার ল্যাবেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পূর্ণিমার জোয়ারের সময় পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় সেতুটিক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, কালারপোল সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে কোলাগাঁওতে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পটিয়া উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন, জনপ্রনিধি ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য এমএ রহিম জানিয়েছেন, পটিয়া কালারপোল সেতুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। কর্ণফুলী নদীর শাখা শিকলবাহা খালের উপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। নতুনভাবে সেতু নির্মাণের আগে এলাকার লোকজনকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়েএপাড় থেকে ওপারে চলাচল করত। ফলে লোকজন নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতো। এ সেতুউদ্বোধনেরপর এলাকায় শিল্পকারখানা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী জানান, কালারপোল অহিদিয়া সেতুর দুই পাড়ে শিল্পকারখানা ছাড়াও হাজার হাজার মানুষের বসতি। সেতু এলাকায় রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ অসংখ্য শিল্প-কারখানা। সেতুটি চালু হলেমাদ্রাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরশিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। এটি পটিয়ার জন্য একটি ‘মিনি পদ্মা সেতু’ বলে তিনি মনে করেন।