রুকাইয়া মিজান মিমি »
ক্যান্সার জুড়ে এক আতঙ্কিত শব্দ। এটি যদি হয় স্তন ক্যান্সার তবে আতঙ্ক যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বর্তমান পৃথিবীতে নারী-মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা শনাক্ত করেছেন এই স্তন ক্যান্সারকেই। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে এটি ভয়াল আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৫ লক্ষাধিক নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং প্রতি লাখে ১৫ জন মারা যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, প্রতিবছর ১৫ হাজারের অধিক মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং বছরে প্রায় সাড়ে সাত হাজারেরও অধিক মানুষ মারা যাচ্ছে, যার ৯৮ শতাংশই নারী।
নানা কারণেই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ সমূহ হলো- গড় আয়ু বৃদ্ধি, পরিবারের কোনো সদস্য পূর্বে আক্রান্ত হলে এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতা, অস্বাস্থ্যকর ডায়েট, অনিয়মিত খাদ্যাভাস, ফাস্টফুড ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ, জন্মনিরোধক পিলের প্রভাব, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ও শারীরিক পরিশ্রমবিমুখতাসহ নানাবিধ অনিয়ম। পাশাপাশি আর একটি কারণ তামাক জাতীয় পণ্য গ্রহণ। যদিও আমাদের দেশে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা নগণ্য তবুও তারা পরোক্ষভাবে এর শিকার হয়, বেশিরভাগ পরিবারের পুরুষ সদস্য তাদের পাশেই ধূমপান করায় এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তাদের মুক্তি আর সম্ভব হয় না। এছাড়া গ্রামের অনেক বয়স্ক নারী জর্দা ও তামাক পাতা সেবন করে থাকে, যার ফলে বেড়ে যায় স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি।
মূলত ঋতুগ্রাব বন্ধের পূর্ব-মুহূর্তে বা পরবর্তী সময়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়। এর উপসর্গ প্রাথমিক অবস্থায় খুবই সামান্য আকারে প্রকাশ পায়। সাধারণত স্তনে ব্যথা অনুভূত হওয়া, চুলকানি, লাল রং ধারণ, স্তনের চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, চামড়ার নিচে চাকা বা গুটি অনুভূত হওয়া, স্তনের বিকৃত আকৃতি এসবই প্রথম পর্যায়ে দেখা মেলে। এর উপসর্গ দেখা দেয়ার পর খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে এবং স্তনে ঘা ফুটে বের হয়। তাই প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেয়ার পরপরই যতদ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। তবে এ ক্ষেত্রে সজাগ নয় অধিকাংশ নারী। ধর্মীয় কুসংস্কার ও গোপন বিষয় প্রকাশে সংকোচের ফলে সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারাতে হয় তাদের। কেউ বা হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শে নতুবা গ্রামীণ চিকিৎসায় রোগকে ভয়াবহ করে তোলে। এমন সংকটাপন্ন রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না অনেক সময়ই। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজন কঠোর সচেতনতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- নিয়মিত খাদ্যাভাস, বেশি বেশি রাফেজ যুক্ত মৌসুমী ফল ও সুষম খাবার গ্রহণ, নিজের যতœ নেওয়া, শারীরিক ব্যায়াম করা এবং ৩০-৩৫ বছরের পর নিয়মিত স্তন পর্যবেক্ষণ করার মধ্য দিয়ে স্তনে এই অনিয়মিত কোষ বিভাজন থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি নারীদেরকে মাসে একবার করে হলেও স্তন চেকআপ করানো জরুরি। কেননা, গবেষণা বলছে যতজন নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তার ৪০ শতাংশই ৫০ বছর বয়সী। স্তনে সামান্য অস্বাভাবিকতা হলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখা জরুরি, ব্যক্তিগত সচেতনতাই পারে এ যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে মুক্তি দিতে। আর যদি কেউ আক্রান্ত হয়েই যায় সে ক্ষেত্রে রোগীকে মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে। পরিবারের সকলের সহচার্য ও পরিচর্যা বাড়াতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ ও কেমিওথেরাপি প্রয়োগ করে এর থেকে শতভাগ পরিত্রাণ লাভ সম্ভব।
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়