দেশের সীমান্ত জেলাগুলি করোনা সংক্রমণের জন্য ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। বৈধÑঅবৈধ পথে ভারত থেকে যারা আসছেন তাদের অনেকের মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে, কিছু রোগীর মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও শনাক্ত হয়েছে। দেশের কয়েকটি সীমান্তবর্তী জেলায় করোনা সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার পরিস্থিতি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার হয়েছে ৫৫ শতাংশ যা অতিশয় বিপজ্জনক, যেখানে দেশে গড়ে রোগী শনাক্তের হার ৮.১৫ শতাংশ। সংক্রমণ শনাক্ত রাজশাহীতে ৩৩%, সাতক্ষীরায় ৪২%, যশোরে ২০% । পত্রিকান্তরে প্রকাশ, সীমান্তবর্তী বেশ কিছু জেলায় শনাক্তের হার ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত সোমবার করোনা উপসর্গ ও করোনায় মারা গেছেন ১০ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জেলায় ৭দিনের জন্য বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেছেন। রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে (ব্যতিক্রম ছাড়া) যানবাহন এই জেলায় ঢুকতে বা দেশের অন্যত্র যেতে পারবে না। একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদের পরের ১০দিন ঢাকার বাইরে রোগী বেড়েছে ২৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম মহানগরীর হাসপাতালগুলিতে আগের চাইতে তুলনামূলক রোগী বেড়েছে ৭ শতাংশ। নতুন রোগ ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ উপসর্গ নিয়ে ঢাকায় ১জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন আরো দুজন, জনগণকে সতর্ক না হয়ে উপায় নেই।
দেশের সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরগুলিতে ভারতের পণ্যবাহী যানবাহনের চালক, সহকারিরা করোনা সনদ ছাড়াই অবাধে ঢুকছেন, তারা ঘোরাফেরা করছেন, তাদের পরীক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না। বৈধপথে বাংলাদেশি যাত্রী যারা ঢুকছেন তাদের শনাক্তের ব্যবস্থা থাকলেও অবৈধপথে প্রতিদিন শত শত বাংলাদেশি ভারত হতে ঢুকছেন যাদের কোনরূপ পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সীমান্তে কঠোর নজরদারি না হলে সংক্রমণ পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতি ঘটতে পারে এমনই আশঙ্কা স্বাস্থ্যবিদদের। কেননা এরা এলাকা এবং দেশের সর্বত্র ঘুরছেন, তাদের সংস্পর্শে যারা আসছেন তাদেরও সংক্রমিত হবার ভয় আছে। সীমান্তবর্তী জেলাসমূহের অধিবাসীরা শঙ্কায় আছেন করোনার অবনতিশীল পরিস্থিতির কথা ভেবে। সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সচেতন করতে হবে। বিশেষ করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদের তাদের এলাকায় বাহির থেকে আসা লোকজনের তথ্য প্রশাসনকে জানাতে হবে অবিলম্বে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে আম ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী ও ক্রেতাÑবিক্রেতার অধিক সমাগমের কথা বলছেন কিছু বিশেষজ্ঞ। আমের সিজন হিসেবে এই ধারণা অযৌক্তিক নয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচিত এ ব্যাপারে বিশেষ গবেষণা করে উৎস বের করা। সংক্রমণ পরিস্থিতি ঠেকাতে সকল ধরণের উপাদান বিবেচনায় নিতে হবে নতুবা একবার পরিস্থিতির অবনতি হলে বা সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করলে আমাদের সীমিত সাধ্য নিয়ে সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। জেলা থেকে ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যন্ত মনিটরিং জোরদার করতে হবে। ভারত থেকে আসা লোকজনের কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ এবং নারী সমাজকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করা দরকার যাতে তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারে। দেশে এখন লকডাউন আরো ১ সপ্তাহ বেড়েছে, বিধিনিষেধ মেনে গণপরিবহন চালুর কথা বলা হয়েছে। বিধিনিষেধ মানা, মাস্ক পরিধান, সমাগম এড়িয়ে চলা, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, টিকা গ্রহণ করোনা থেকে রক্ষা পাবার শ্রেষ্ঠ উপায়। টিকা যত দ্রুত সংগ্রহ এবং জনগণকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা যাবে ততই করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
মতামত সম্পাদকীয়