কালচারাল অ্যান্ড হেরিটেজ জোনে বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন নেই
হাসপাতাল যাতে এখানে না হয়
-
-
- সেজন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে : ড. অনুপম সেন
- শহরের বাইরে বা প্রান্তীয় এলাকায়
এমন হাসপাতাল হতে পারে: স্থপতি জেরিনা হোসেন - সংরক্ষিত এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন সিডিএ দেয়নি: প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ
-
ভূঁইয়া নজরুল »
পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং কালচারাল অ্যান্ড হেরিটেজ রক্ষার স্বার্থেই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান এবং ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপে) কদমতলী মোড়, টাইগারপাস মোড়, আমবাগান একে খান প্রধান অফিস, বাঘগোনা, লালখান বাজার মোড়, জমিয়তুল ফালাহ, আলমাস, কাজীর দেউড়ি, নেভাল ও গোয়ালপাড়া হয়ে কদমতলী মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকাটি কালাচারাল অ্যান্ড হেরিটেজ জোন হিসেবে মার্ক করা। এই এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন নেই।
প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এপর্যন্ত এই এলাকাটি রক্ষা করে আসছে উল্লেখ করে সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা এই এলাকায় এখনো পর্যন্ত কোনো স্থাপনার অনুমোদন দেইনি। সার্কিট হাউজ নির্মাণ করার সময় আমরা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে তা না করার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম, শিশুপার্কটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসাথে পুরো এলাকায় গড়ে উঠা বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনার কোনো অনুমোদন এখনো পর্যন্ত সিডিএ দেয়নি। এলাকাটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাই এই এলাকায় ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সিডিএ অনুমোদন দেওয়ার কোনো প্রশ্œই আসে না। আর সিডিএ’র অনুমোদন ছাড়া কোনো স্থাপনা নগরীতে গড়ে উঠতে পারে না।’
এদিকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পেছনের দিক এবং পুলিশ সুপারের বাংলোর মধ্যবর্তী ছয় একর জায়গায় ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি গড়ে তোলা হলে কোনো গাছ কাটা পড়বে না। একইসাথে এলাকার সবুজেরও কোনো সমস্যা হবে না। তবে এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমগত পোষণ করে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও সিডিএ’র ড্যাপ প্রণয়নকারী স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘ছয় একর জায়গায় ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল এবং ১০০ আসনের একটি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলা বিশাল ব্যাপার। তখন বাস্তবিক অর্থে এর পরিধি প্রায় দুই কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে হবে। এই এলাকায় আরো অনেক স্থাপনা গড়ে উঠবে এবং বাড়বে ট্রাফিক। এতে পুরো এলাকার জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে।’
এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিতে স্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়ে থাকে উল্লেখ করে স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘এমন স্থাপনা নগরীর প্রান্তীয়, শহরতলী কিংবা শহরের বাইরে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে হাটহাজারী, সীতাকু-, পটিয়া, আনোয়ারা কিংবা পতেঙ্গা বা হালিশহরের দিকে হতে পারে। এতে নগরমুখী মানুষের চাপ কমবে এবং প্রান্তীয় এলাকার মানুষ যেমন সুবিধা পাবে তেমনিভাবে উন্নয়নও ছড়িয়ে পড়বে।’
বর্তমানে নগরীর মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করছেন সিডিএ’র উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী। মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা আবু ঈসা আনসারী বলেন, ‘যদি রেলওয়ের জায়গায়ই হাসপাতালটি করতে হয় তাহলে নগরীর আমবাগান ভাঙ্গাপুলের কাছে রেলওয়ের বিশাল জায়গা রয়েছে। আমরা নর্থ-সাউথ রোডও করছি এই এলাকার পাশ দিয়ে। আবার জাকির হোসেন রোডের পাশে শহীদ লেন রেলওয়ে কলোনিতেও হাসপাতালটি করা যায়। সেখানেও রোড কানেকটিভিটি রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, হালিশহর শারীরিক শিক্ষা কলেজের পাশেও রেলওয়ের জায়গা রয়েছে, সেখানেও হাসপাতালটি করা যায়। আউটার রিং রোডের ফিডার রোড-২ বাস্তবায়ন হচ্ছে ওই এলাকার পাশ দিয়ে। এতে আউটার রিং রোড দিয়ে শহরের বাইরের মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু কোনোভাবেই শহরের ভেতরে এবং কালচারাল অ্যান্ড হেরিটেড হিসেবে সংরক্ষিত জায়গায় তা হতে পারে না।
এদিকে নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলে নগরীর সবুজায়ন বিনষ্ট হবে বলে তা রক্ষার জন্য আন্দোলন করছেন বিশিষ্টজন, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়েছে। চিঠি দেয়ার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এবং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, ‘সিআরবির কিছুটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হলেও এখনো নগরীর অন্যতম প্রাকৃতিক স্পট এই স্থানটি। এখানে হাসপাতাল হলে প্রাকৃতিক এই পরিবেশ বিনষ্ট হবে। তাই হাসপাতালটি এখানে সরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল করার জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যাবে কিন্তু সিআরবির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। অতীতে নগরীর পরীর পাহাড়সহ অনেক প্রাকৃতিক স্পট এভাবে হারিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় সিআরবিতে রেলওয়ের ছয় একর জায়গায় ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত বছর তা অনুমোদন পাওয়ার পর প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদের মধ্যদিয়ে সম্প্রতি নির্মাণ কাজ শুরু করে। আর তখনই চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মী, পরিবেশবাদী এবং চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এর বিরোধিতায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও সিআরবির পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ হোক তা চান না।