সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউরোপীয় ও মার্কিন ভোক্তারা রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির চাপে পোশাক ও অন্যান্য বিলাসবহুল পণ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়েছে। সে কারণেই শিপিং লাইনে পণ্য বুকিং এখন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
গন্তব্য দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও মজুদ পণ্য বাড়ার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে এসেছে মন্থরতা। মহামারির সময় দেশের সমুদ্রপথে পরিবহন খরচ বাড়লেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে এসেছে। খবর টিবিএস’র।
চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে জাহাজ চলাচলের খরচ এখন প্রতি ২০ ফুট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ডলার। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মহামারির প্রাদুর্ভাব যখন শীর্ষে তখন এই কন্টেইনারের খরচ ছিল সাড়ে ১২ হাজার ডলার। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রগামী জাহাজে প্রতি ২০ ফুট কন্টেইনারে আগে ২০ হাজার ডলার খরচ পড়লেও এখন তা ১০ হাজার ডলারে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
মহামারি কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সরবরাহ চক্রের ব্যাঘাতও পণ্য পরিবহন খরচ কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি তারা এখনও কোভিড পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অন্তত তিনগুণ বেশি খরচ দিচ্ছেন।
কোভিডের আগে একটি ২০ ফুট কন্টেইনার চালানের জন্য ইউরোপের ক্ষেত্রে আড়াই হাজার ডলার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তিন হাজার ডলার খরচ পড়ত।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, চলমান বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে চাহিদা কমে যাওয়াটা পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ।
ইউরোপীয় ও মার্কিন ভোক্তারা রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির চাপে পোশাক ও অন্যান্য বিলাসবহুল পণ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়েছে। সে কারণেই শিপিং লাইনে পণ্য বুকিং এখন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মার্কিন ডলারের বর্তমান দরের হিসাবে ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়কালে মূল্যের দিক থেকে জি২০ পণ্যদ্রব্যের বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যহারে কমে আসতে থাকে।
গত সোমবার ওইসিডি প্রকাশিত জি২০ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুসারে, রপ্তানি ও আমদানি যথাক্রমে আগের ত্রৈমাসিকের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ২ শতাংশের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রিটেইল টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান মেটাপ্যাকের সঙ্গে মিলিতভাবে রিটেইল ইকোনমিক্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ ব্রিটিশ ক্রেতারা বলেছেন তারা বছরের শেষ তিন মাস ‘গোল্ডেন কোয়ার্টার’-এ খাদ্য-বহির্ভূত খরচ কমিয়ে আনবে। অথচ বেশিরভাগ খুচরা বিক্রেতা তাদের সিংহভাগ লাভ এই সময় ঘিরেই করে থাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ ক্রেতারা গত বছরের তুলনায় এবছর বিলাসদ্রব্যে ২২ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় কমাবে যার মূল্য প্রায় ৪.৪ বিলিয়ন পাউন্ড।
এটি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এছাড়াও স্পেনে ১৪ শতাংশ, ইতালিতে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, ফ্রান্সে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জার্মানিতে ব্যয় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে দুই বছর আকাশছোঁয়া পরিবহন ব্যয়ের পর শিপিং খরচ কমে যাওয়া রপ্তানিকারক এবং আমদানিকারক উভয়ের জন্যই সুখবর। স্থানীয় বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে গন্তব্য দেশগুলোতে পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানিকারকরা পরিবহন খরচ কমে যাওয়ার বিষয়টিকে কাজে লাগাতে পারবে না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, পরিবহন খরচ কমে যাওয়ায় শিপমেন্ট খরচ বহনকারী পোশাক ক্রেতাদের ওপর থেকে চাপ কিছুটা কমবে।
এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রম কমেছে। বন্দরটিতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এক লাখ ২০ হাজার ৪৭০ টিইইউ (টোয়েন্টি ফুট ইকুইভালেন্ট ইউনিট) আমদানি পণ্য আসলেও চলতি বছর একই মাসে এক লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ টিইইউ পণ্য এসেছে। অন্যদিকে, রপ্তানি পণ্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৬৮ হাজার ৮৯১ টিইইউ হলেও এবছর তা ৬৩ হাজার ৮০৩ টিইউতে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, শিপিং কোম্পানিগুলো মহামারিকালীন সংকট মাথায় রেখে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়িয়েছিল যার ফল শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রয়োজনীয় পণ্যের দামেও প্রভাব ফেলেছে।
তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে এবং শিপিং চার্জ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় ফিরে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।