শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
চলতি মৌসুমে দেশে শতভাগ লবণের চাহিদার যোগান দিলো চাষিরা। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা এ লবণের উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে পলিথিন প্রযুক্তি। টানা নয় মাসে মাত্র তিন দফা বৃষ্টি ও অসহ্য তাপ লবণ উৎপাদনে রেকর্ড গড়তে সহায়ক হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
লবণ চাষি সূত্রে জানা যায়, আগে মাটিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সামুদ্রিক নোনা পানি তিনটি ধাপে ছয় থেকে সাত দিন ধরে চাষ করা হতো। এতে উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত দুটি জমিতে কোনো ফলন পাওয়া যেতো না। এছাড়াও মাটিতে চাষ হওয়ার কারণে লবণে মাটি লেগে থাকতো। ফলে লবণের রঙ থাকতো বাদামি। কিন্তু এখন চাষের জমিতে পলিথিন বিছিয়ে সেখানে সমুদ্রের পানিতে রোদের তাপ লাগিয়ে চার থেকে পাঁচ দিনে লবণ উৎপাদন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমানে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি চাষ হচ্ছে একটি জমিতে। তাই অধিকতর জমি চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পলিথিনে শুকানোর কারণে লবণ সংগ্রহের সময়ও মাটি লেগে থাকে না। এসবের পেছনে কার্যকরী ছিলো লবণ চাষ নিয়ে বিসিকের প্রশিক্ষণ।
এ প্রসঙ্গে কুতুবদিয়া অঞ্চলের লবণচাষি মো. ফরিদ বলেন, ‘লবণ চাষে আমাদের আগে অনেক ধরনের ভুল ছিলো। বিসিক থেকে চাষের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আমরা ফলন ভালো পেয়েছি। চাষের সময় বিসিকের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। এছাড়া বিসিক আমাদের দামের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছে। এবার দামও ভালো পেয়েছি। আর প্রকৃতিও এবার আমাদের ওপর সহায় হয়েছে বলে উৎপাদন ভালো হয়েছে।’
বিসিকের লবণ সেল জানায়, এবার পাঁচ থেকে ছয় হাজার লবণ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণে তাদের ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে থেকে পানি সংগ্রহে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচের স্তরের পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া এ মৌসুমে এক মাস আগে থেকে লবণ চাষ শুরু হয়। ফলে দেশের চাহিদার প্রায় ২০ লাখ মেট্রিকটনের বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিসিকের লবণ সেলের প্রধান সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের সব উপজেলাসহ (কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও ও রামু) বাঁশখালী উপজেলার মোট ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ হয়। অনেক সময় চাষিরা চাষে আগ্রহী থাকে না। এবার আমরা তাদের দামের নিশ্চয়তা দেওয়ার কারণে তারা সব জমিতে চাষ করেছে। তারা গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে দামও পেয়েছে, যা আগে ছিলো ১২০ থেকে ২০০ টাকা। গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে ২০ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিকটন।’
লবণের বাম্পার উৎপাদনে প্রকৃতির ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার প্রকৃতি খুব ভালো ছিলো। প্রচ- তাপ ছিলো। বৃষ্টি ছিলো না বললেই চলে। পুরো মৌসুমে তিন দফার বৃষ্টিতে ১০ দিনের মতো চাষ বন্ধ ছিলো। ৩০ থেকে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন দৈনিক উৎপাদন ছিলো। তবে আকাশ মেঘলা থাকলে উৎপাদন কমে ১৫ থেকে ২২ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হতো। সব মিলিয়ে বলা যায়, আমাদের এবারের গড় উৎপাদন ২২ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বলা যায়।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালেও রেকর্ড ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন করা হয়। এবার লবণ উৎপাদনে লবণ চাষের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
কেন উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ আমরা ১৫ নভেম্বর থেকে লবণ চাষ শুরু করিয়েছি। এছাড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বেশি লবণ পানির স্তর নির্ধারণ করে দিয়েছি। পাশাপাশি পলিথিনের ব্যবহারে লবণের উৎপাদন পরিমাণ বাড়তে আগ্রহী করেছি।’