সুপ্রভাত ডেস্ক »
আবারও আফগানিস্তানে ক্ষমতার মসনদে তালেবান। সংগীত ও চলচ্চিত্রের ঘোরবিরোধী এ গোষ্ঠী এর আগে বিনোদন সংশ্লিষ্ট মানুষকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। তবে এবার তালেবানরা বলছে তারা নাকি আগের চেয়ে উদার। কিন্তু দেশটির অনেক নারী চলচ্চিত্রকর্মী তা মানতে নারাজ। সব মিলিয়ে জেনে নেওয়া যাক আফগান চলচ্চিত্রের ভূত ও ভবিষ্যৎ—
প্রথম চলচ্চিত্র
‘লাভ অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ’ (১৯৪৬) দেশটির প্রথম ছবি। আমির হাবিবুল্লাহ খানের হাত ধরে চলচ্চিত্রের সন্ধান পায় আফগানিস্তান। কাবুলের কাছে পঘমন শহরে প্রজেক্টরে প্রথম নির্বাক এ ছবি দেখানো হয়। সে বছরই ১৯৬৮ সালে ‘আফগান ফিল্ম অরগানাইজেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য
দেশটির প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি হলো ‘লাইক ঈগলস’। এটি সাদা-কালো সিনেমা। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আফগান অভিনেতা-গায়ক জাহির ওয়াইদা ও নাজিয়া নামের এক কিশোরী।
প্রথম রঙিন ছবি
ষাটের দশকে সোভিয়েত রাশিয়ার দখলে আসার পর সে দেশে চলচ্চিত্র শিল্পের গুরুত্ব বাড়ে। আশির দশকে প্রথম রঙিন ছবি দেখতে পান আফগানরা। ছবিগুলোর মধ্যে আছে ‘রান অ্যাওয়ে’, ‘লাভ এপিক’, ‘সাবুর সোলজার’।
গৃহযুদ্ধ
১৯৯০-এ গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ধাক্কা খায় আফগান সিনেমা। সে সময় বহু নির্মাতা ইরান ও পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। এরপর তালেবান ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় যাবতীয় সিনেমা।
প্রথম ক্ষমতায় তালেবান
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনে বহু ছবির রিল পুড়িয়ে ফেলা হয়। বন্ধ হয়ে যায় প্রেক্ষাগৃহ। টেলিভিশনেও আসে নিষেধাজ্ঞা। চলচ্চিত্র শিল্পকে তালেবান সমূলে ধ্বংস করার আগেই ‘আফগান ফিল্ম অরগানাইজেশন’-এর এক সদস্য হাবিবুল্লাহ আলি কিছু রিল লুকিয়ে ফেলেন মাটির তলায়।
চলচ্চিত্রের নতুন যুগ
২০০১ সালে আফগানিস্তানে আমেরিকান সেনারা প্রবেশের পর আফগান চলচ্চিত্র যেন কিছুটা অক্সিজেন পায়। তাই এ বছরকেই চলচ্চিত্রের নতুন যুগের শুরু ধরা হয়। চালু হতে থাকে প্রেক্ষাগৃহগুলো। চালু হওয়া প্রথম প্রেক্ষাগৃহের নাম ‘বখতার’। প্রায় হাজার খানেক মানুষ সেদিন হলে যান।
নতুন ছবি মুক্তি
দীর্ঘ বিরতির পর ২০০২ সালে নতুন ছবি ‘টিয়ারড্রপস’ মুক্তি পায়। তাদের সর্বশেষ ছবি ছিল ‘ওরুজ’। সেটা ১৯৯৫ সালে বানানো হয়েছিল।
আফগান চলচ্চিত্রে নারীরা
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান শাসনে সিনেমায় সুযোগ পাননি আফগান নারীরা। ধীরে ধীরে আবারও তাদের গল্প ফুটে ওঠে পর্দায়। গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন লীনা আলম, আমিনা জাফারি, সাবা শাহের, মরিনা গুলবাহারি প্রমুখ। প্রথম দফার তালেবানি শাসনের আগেও নারীরা অভিনয় করতেন।
আফগান অভিনেত্রী-নির্মাতাকে হত্যাচেষ্টা
অভিনেত্রী সাবা প্রথম আফগান নারী পরিচালক-প্রযোজকও। ২০০৪ সালে তার প্রথম ছবি ‘দ্য ল’ মুক্তি পায়। সাফল্য পায় সেই ছবি। ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট কাবুল যাওয়ার পথে তাকে গুলি করে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আফগান নারীদের অধিকার নিয়ে ছবি বানানোর ‘অপরাধেই’ আক্রান্ত হন সাবা, এমনই মনে করা হয়।
বর্তমান তালেবান
গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘তালেবান শাসনে নারীদের কাজ করার অধিকার দেওয়া হবে। তারা কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারবেন। তবে সবই হবে শরিয়াহ আইন মেনে। এর বাইরে গিয়ে কিছুই হবে না।’
তবে প্রশ্ন হলো, আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের দ্বিতীয় দফা কি সত্যিই আগের চেয়ে আলাদা হবে? নাকি ইতোমধ্যে ফুটবল থেকে মেয়েদের সরে দাঁড়ানোর হুকুমের মতো চলচ্চিত্রেও তারা থাকবেন ব্রাত্যজন?