রাজু কুমার দে, মিরসরাই >>
রুপালি ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে মিরসরাই উপজেলার ২৯টি জেলে পাড়ার জেলেদের। দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে জাল ফেলেছে তারা। জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। সেই মাছ কিনতে ঘাটে ভিড় করছে মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালে।
মিরসরাই মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন উপজেলার ২৯টি জেলে পাড়ার ২১২৬ জন জেলেকে দুই ধাপে ৮৬ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন সাগরে অভিযান চালানো হয়। সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হওয়ায় বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। তাই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ।
সাহেরখালী ঘাটে সরেষজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট বড় নৌকায় সাগর থেকে ইলিশ ধরে ঘাটে ফিরছে জেলেরা। জেলেদের নিয়ে আসা ইলিশ নৌকা থেকে নামানোর সাথে সাথে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ঘাটেই। ছোট ছোট টুকরিতে ১০-১৫ কেজির ইলিশ আকার ভেদে দাম ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত। প্রতি কেজি আকার ভেদে ৩০০-৭০০ টাকা। এই ঘাটে মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়ন ও সাহেরখালী ইউনিয়নের জয়নগর, খেপারহাট ও সাহেরখালীসহ ৩ গ্রামের প্রায় ৪৫০-৫০০ জন জেলে মাছ ধরার সাথে যুক্ত। ১৫০টি ছোট বড় নৌকা নিয়ে এসব জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতে যায় সাগরে। শুধু সাহেরখারী ঘাটে পাওয়া যায় দৈনিক ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কেজি পর্যন্ত ইলিশ।
সমুদ্র থেকে ইলিশ নিয়ে আসা জেলে দুলাল জলদাশ ও অনিল জলদাশ জানান, শুক্রবার থেকে সাগরে ইলিশ শিকারে নেমেছেন। জালে ধরাও পড়ছে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ। রোববার প্রথম জোয়ার নামার পর দুপুর ১১টায় খাল বেয়ে সাগরে যান তারা। পরে মাছ ধরে ফিরেন বিকাল সাড়ে ৩টায়। আগের দুইদিন ইলিশ বেশি পেলেও এই জোয়ারে মাছ কম পেয়েছেন। এবার জালে ধরা পড়েছে প্রায় ১৫ কেজি। বিক্রি করেছেন সাড়ে ৪ হাজার টাকায়।
এদিকে জেলেরা অভিযোগ করেন সাহেরখালী খালের মুখে সাগর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ফলে নৌকা নিয়ে আসতে কষ্ট হয়। তবে নবনির্মিত এই বেড়িবাঁধ প্রবল জোয়ারের তোড়ে নির্মাণাধীন সøুইস গেটসহ ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের সময় নৌকা নিয়ে আসা গেলেও, জোয়ারে পানি নেমে গেলে নৌকা নিয়ে আর আসা যায় না। তাই অপেক্ষা করতে জোয়ারের জন্য। এই সময়ের মধ্যে মাছ ঘাটে আনতে আনতে কিছু মাছে পচনও ধরে যায়।
জেলেদের কাছ থকে রুপালি ইলিশ কিনেন সনাতন দাস নামে এক মাছ ব্যবসায়ী। সনাতন দাস বলেন, তিনি আগে সাগরে মাছ ধরতেন। গত কয়েক বছর ধরে সাগরে আর যান না। এখন জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করেন। তিনি আরো বলেন, এখন বাজারে ইলিশের চাহিদা খুব বেশি। আকার ভেদে বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক তদারকি করার ফলে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেনি। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময় উপজেলার ২১২৬ জন জেলেকে দুই ধাপে ৮৬ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে।
স্বদেশ