সুপ্রভাত ডেস্ক »
জীবনে চলার পথে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে, আসে দুশ্চিন্তা। বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ, নতুন কোন চ্যালেঞ্জ বা কাজের মুখোমুখি হলে মনে উদ্বেগ আসা অস্বাভাবিক না। এই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে আমাদের আচরণেও কিছু কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। যা দির্ঘস্থায়ী মানসিক সমস্যায় রূপ নিতে পারে।
কেউ কেউ নিজের অজান্তেই সবকিছুতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, দুশ্চিন্তা করতে থাকেন। তখন তারা সামান্য কিছুতেই নার্ভাস বোধ করে এবং কোন কাজ ঠিকমত করতে পারেন না। এভাবে যারা অল্পেই ঘাবড়ে যায় তাদের প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
কখনো কখনো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা মেন্টাল ডিসঅর্ডার বা মানসিক সমস্যা তৈরি করে। আর এর উৎপত্তি মানুষের মনে জন্ম নেওয়া ক্রমাগত দুশ্চিন্তা ও সন্দেহ থেকে তৈরি হওয়া উদ্বিগ্নতা। জেনে নিন উদ্বেগ থেকে জন্ম নেয় এমন তিনটি মানসিক সমস্যা সম্পর্কে।
সিলেক্টিভ মিউটিজম: এই সমস্যায় ভুগছেন যিনি তিনি প্রয়োজনের সময় কথা হাতড়ে বেড়ান। এমনিতে দেখা গেল যোগাযোগ দক্ষতা ভালো কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়ার মত পরিস্থিতিতে হুট করে কথা খুঁজে পাবেন না। সহজ করে বলতে গেলে এটিই সিলেক্টিভ মিউটিজম। কোন কিছু নিয়ে ঘাবড়ে গেলে এমন পরিস্থিতির শিকার হবেন। এসময় আত্মবিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়। তবে এই সমস্যা কিন্তু শিশুদের তেমন একটা হয় না। বড়রাই বেশি আক্রান্ত হন। গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছালে অনেকসময় থেরাপির প্রয়োজন হয় এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে।
বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার: ছোট চোখ, মোটা নাক, চোখের পাপড়ি কম, ভ্রু নাই, পেটে চর্বির ভাঁজ, কোমর যথেষ্ট সরু নয়- শরীরের এমন নানা বিষয় নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন অনেকে। এতটাই যে ঘর থেকে বের হতে বা অন্যের সামনে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন। এসব ‘খুঁত’ ঢাকতে অনেকটা সময় ব্যয় করেন। অনেকে অস্ত্রোপচারে কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢালেন। এই ডিসঅর্ডারে ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা সাধারণত নির্দিষ্ট কোন শারীরিক বৈশিষ্টের জন্য যতটা সম্ভব সামাজিকতা থেকে নিজেদের দূরে রাখেন।
ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া: এটি একটি দুর্লভ ডিসঅর্ডার। এই মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে চুল বা পশম তোলার তীব্র ইচ্ছা তৈরি হয়। সাধারণত মাথার তালু, চোখের পাতা, বা ভ্রু থেকে চুল ওঠায়। সাধারণত ভয় পেলে বা উদ্বিগ্ন হলে এভাবে চুল ওঠানোর পর ট্রাইকোটিলোম্যানিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি আরাম বোধ করেন। অনেকের জন্য এটি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর উপায়। বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করলে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথার চুল অতিমাত্রায় কমে যেতে পারে বা মানুষের সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে।
এই ডিসঅর্ডার বা বিশেষ মানসিক অবস্থায় একজন ব্যক্তি কী আচরণ করছেন সেটি ঠিক করার চেয়েও জরুরী এর পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো খুঁজে বের করা ও সমাধান করা। যে উদ্বেগ আপনাকে এই আচরণ করতে বাধ্য করছে সেটি থেকে বের হয়ে আসুন। প্রয়োজনে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, নিজের শরীরের যত্নের পাশাপাশি মনেরও যত্ন নিতে হবে। দিনের শেষে, সুস্থ মনই নিশ্চিত করবে শারীরিক সুস্থতা।