নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘আব্বা (বঙ্গবন্ধু) জীবিত থাকতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নিয়ে যেতেন। জীবনে অনেকবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে গিয়েছি। যার কারণে চট্টগ্রামের প্রতি আলাদা একটা টান আছে। আজকে চট্টগ্রামের সাথে কথা বলছি, অনেক নেতা আমাদের মাঝে নেই। প্রয়াত নেতারা মুক্তিযুদ্ধে বিরাট অবদান রেখেছেন। মনটাই পড়ে আছে চট্টগ্রামে। যদি নিজে গিয়ে টানেলের টিউবটা দেখে আসতে পারতাম, খুশি হতাম। তবে আল্লাহ সুস্থ রাখলে আসবো। ৪ তারিখ জনসভা আছে। আরেকটি গর্ব এই টানেলের দ্বিতীয় টিউবের কাজ শেষ হলে শিগগিরই সেখানে যাব।’
শনিবার সকালে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে’র দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি ঘোষণার অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে গ্রহণ করে। অথচ আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশের উন্নয়ন চায়নি। যার ফলে দেশটা এগোতে পারেনি। গত ১৪ বছরে এ দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিই করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করেছি। এতে অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। কিছুদিন আগে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছি। যে পদ্মা সেতু নিয়ে বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। অনেক অপবাদ দিয়েছিল। চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম এবং ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজেদের অর্থায়নে করবো। বাংলাদেশ যে পারে সেটা প্রমাণ করেছি এই পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে। নিজস্ব অর্থায়নে যে পারি, তা দেখিয়ে দিয়েছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করছি। এটা চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিনেরও দাবি ছিল।’
টানেল নির্মাণের ঋণ প্রস্তাবের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন সফরে খেতে খেতে চীনের প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রস্তাবটা দেই। তিনি খাওয়ার টেবিলেই রাজি হয়ে যান। আমাদের টিমের সদস্যরা খাবার না খেয়েই বের হয়ে গিয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করে। পরে এটির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। এরপরও স্থানীয় জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ যে কোনো একটা উন্নয়নের কাজ করতে গেলে অনেক সময় স্থানীয় জনগণ বাধা দেয়। কিন্তু এই কাজটা করার সময় মানুষের যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেছি ঠিক পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তা-ই দেখেছি। স্থানীয় লোক নিজের ঘরবাড়ি বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি সব ছেড়ে দিতে হলে তারা ছাড়তে রাজি ছিল। এই টানেল নির্মাণের সময়ও চট্টগ্রামবাসীর কাছ থেকে সেই সহযোগিতা পেয়েছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে চলমান উন্নয়ন কাজের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনভাবেই উন্নয়নের গতি থামাতে পারবে না।’
যে সমস্ত লোক সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চোখে দেখে না, তাদেকে চোখের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের উন্নয়ন অনেকের চোখে পড়ে না। তাদের হয় চোখ নষ্ট, যদি কারো চোখ নষ্ট হয়, তাহলে চোখের ডাক্তার দেখাতে পারেন। আমরা একটা খুব ভালো আই ইনিস্টিটিউট করে দিয়েছি। সেখানে চোখ পরীক্ষা করলে, আমার মনে হয় তাহলে হয়তো তারা দেখতে পারবেন। আর কেউ যদি চোখ থাকতে অন্ধ হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নাই।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়নের কৃতিত্ব জনগণকে দিয়ে বলেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ২০০৮ সালে এবং টানা তিনবার নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে আমরা দেশের উন্নয়নের কাজগুলো করতে পেরেছি। সেজন্য আমি জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তাঁর সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনের হাইওয়েকে ৬ লেনের করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। মহেশখালী মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ঐ এলাকাটা একটি ‘ডিপ সি পোর্টে’ পরিণত হচ্ছে। কাজেই সেদিক থেকেও এই অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার এয়ারপোর্টও আমরা উন্নত করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি আমাদের এই টানেল বাংলাদেশের জন্যই শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই প্রথম। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হবে তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকা- আরো গতিশীলতা পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে এটা আরো বেশি অবদান রাখবে।
‘চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় মেট্র্রোরেল হওয়ার পর চট্টগ্রামে এখন আমরা সমীক্ষা শুরু করেছি। এখানে পাহাড়, পর্বত তারপরেও কোথায় কতটুকু মেট্রোরেল করতে পারি তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। পাশাপশি অনেকগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামে আমরা করে দিয়েছি। কাজেই চট্টগ্রামেও যেন মেট্রোরেল হয় সেটাই আমাদের ইচ্ছা।
তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ, চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অথবা কক্সবাজার সমস্ত এলাকায় একটি বিরাট যোগাযোগের নেটওয়ার্ক আমরা প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি, যা মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে।
করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে বিশ^ মন্দা ও বিশ^ব্যাপী খাদ্য সংকটের যে আশংকা করা হচ্ছে, তা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে প্রতি ইঞ্চি অনাবাদী জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর ও জনগণকে সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী এবং সঞ্চয়ী হবার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদযাপন উপলক্ষে টানেল এলাকায় সকাল থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। আশপাশের অনেক এলাকা থেকে তারা অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে অবস্থান নেন। যদিও আমন্ত্রিতদের ছাড়া কাউকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শুরুর আধঘণ্টা আগে থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা আসা শুরু করেন। দুই হাজার অতিথির উপস্থিতিতে বিপুল করতালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদ্যাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এসময় পতেঙ্গা প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী নওফেল, চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিন মিং, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



















































