ভূতের বাগান

দিপংকর দাশ :

রাত নয়টা। পড়ার টেবিলেই ঘুম চলে আসে হাফিজের। বিকেলে ফুটবল খেলায় শরীরটা বেশ ক্লান্ত তার। মা ডাকছে খাবার খেতে কিন্তু সে ঘুমে আচ্ছন্ন। বাবাও দোকান  থেকে চলে এসেছে। হাফিজের বাবার একটা পুতুলের দোকান আছে। সেখানে নানা ধরনের সুন্দর-সুন্দর পুতুল বিক্রি করেন তিনি। দোকান থেকে ফিরে হাফিজকে ডাকছেন, ‘কইরে আমার বাপ? তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমি খাবার টেবিলে বসে আছি।’

কিন্তু হাফিজ তো আর আসছে না। তার বোন তাকে ডাকতে গিয়ে দেখে পড়ার  টেবিলেই শুয়ে আছে। ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুলে এনে খাবার টেবিলে বসায় হাফিজকে। ঘুমের ঘোরে আবোল-তাবোল বকছে সে। বাবা ধমক দেওয়ায় কিছুটা  কেঁপে উঠলো।  তারপর দু-মুঠো খেয়ে বেডরুমে চলে যায়। ঘুমিয়ে পড়ে।

রাত পৌনে তিনটে। হঠাৎই কেন জানি ঘুম ভেঙে গেল হাফিজের। ঘুম ভাঙতেই সে একটি বিড়ালের মিঁয়াও-মিঁয়াও ডাক শুনতে পায়। প্রথমে সে ভাবলো, ঘরের দুষ্টু বিড়ালটা বোধ হয়। কিন্তু অবিরাম ডেকে চলছে। এবার হাতে টর্চলাইট নিয়ে বিড়ালটা খুঁজতে যায় হাফিজ। যেখান থেকে আওয়াজ আসছে সেদিকে যায়। কিন্তু বিড়াল নেই। রুমে ফিরে আসে। একটু পরেই আবার শুনতে পায়। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না সে।

অবশেষে খুঁজতে-খুঁজতে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো সে।  দরজা খোলার পর শুনে বিড়ালের আওয়াজ বাগানের দিক থেকে আসছে। ভয়ে-ভয়ে বাগানের দিকে যায়।  দেখে তাদের দারোয়ান ঘুমোচ্ছে গেটের সামনে। একটু সাহস পেলো মনে। বাগানে ঢুকে শুনতে পেল একটি বাচ্চামেয়ের কান্নার আওয়াজ। সে একটু এগিয়ে গেল। কিছুই  নেই। পেছনে তাকালো। কেউ নেই।

আবার কান্নার আওয়াজ। সামনে তাকালো। দেখে গাছের ফাঁকে লম্বা চুল উড়ছে। মুখ  দেখা যাচ্ছে না। পরনে শাদা জামা। পিছন দিক থেকে মনে হচ্ছে সাতবছরের বাচ্চা  মেয়ে। হাফিজ মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটির কাছে যেতেই মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে কোথায় চলে গেল। ভয়ে দিশেহারা হাফিজ।

সে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পা যে এগুচ্ছে না। কে যেন পায়ে চিমটি মেরে ধরে রাখলো। চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাও পারছে না। কণ্ঠ নিঃসৃত হচ্ছে না তার। পিছনে তাকিয়ে দেখে চারদিক অন্ধকার। অদ্ভুত রকমের ভয়ানক শব্দ আসছে চতুর্দিক থেকে।

হঠাৎ সামনে এসে হাজির হলো লম্বা পেতœী। আগুনের ফুলকি ঝরছে তার চোখ থেকে। হাতের নোখগুলো ইয়া বড়! পরনে শাদা শাড়ি। চুলগুলো যেন আকাশ থেকে মাটিতে এসে ছুঁয়েছে। দাঁতগুলো হাতির দাঁতের মতো। কথা বলার সময় আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। পেতœীটা সজোরে বলছে, ‘আমি তোর ঘাড় মটকাবো। তোর রক্ত খাবো। তোকে হত্যা করবো।’

হাফিজ বলে, ‘কেন? আমি তোমার কী ক্ষতি করেছি? আমাকে হত্যা করবে কেন?

পেতœী বলে, ‘আমার রক্ত পিপাসা পেয়েছে তাই।’

ভয়ে চিৎকার দিচ্ছে হাফিজ। এক সময় অজ্ঞান হয়ে যায় সে। চিৎকার শুনে হকচকিয়ে ওঠে দারোয়ান। দৌড়ে যায় বাগানের দিকে। গিয়ে দেখে হাফিজ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। সে হাফিজকে তুলে আনে। সবাইকে ডেকে সজাগ করে। হাফিজের বাবা-মা অবাক হয়। হাফিজ কী করে এত রাতে বাইরে গেল?

হুজুরকে ডেকে আনা হয়। তিনি এসে ঝাড়-পো দিলেন। জ্ঞান ফিরলো হাফিজের। সে কিছুই জানে না। সে বলে, ‘আমি জানি না কি করে সেখানে গেলাম আর কি হলো? সবাই বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। ওই বাগানে হয়তো কিছু আছে। এরপর হাফিজ আর কখনো একা-একা বাইরে যায় না। খুব ভয় পেয়ে আছে সে। চুপচাপ থাকে সব সময়।