নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »
রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নে সশস্ত্র হামলায় তিন গ্রামবাসী নিহত হওয়ার দাবি করছেন ওই এলাকার চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ইউনিয়ন সভাপতি আতুমং মারমা। একই দাবি করছেন একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়েইবার ত্রিপুরাও।
তবে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ কিংবা অন্য আইনশৃংখলাবাহিনী।
আতুমং মারমা বলছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘কুকিচীন পার্টি’ নামক একটি নতুন সশস্ত্র সংগঠনের কর্মীরা বড়থলি ইউনিয়নের সাইজান নতুন পাড়ায় এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই ৩ জন নিহত হয়। বিষয়টি আইনশৃংখলাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে বুধবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত কেউই ঘটনাস্থলে যায়নি বলে দাবি করছেন তিনি।
আতুমং মারমা যারা মারা গেছেন বলে জানাচ্ছেন, তারা হলেন বৃষচন্দ্র ত্রিপুরা, সুভাষ ত্রিপুরা এবং ধনরা ত্রিপুরা। এদের মধ্যে সুভাষ এবং ধনরা পিতাপুত্র বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঠিক কি কারণে এই হত্যাকাণ্ড সেই সম্পর্কে বিশদ জানাতে পারেননি তিনি। তবে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টার পায়ে হাঁটার দূরত্বের বান্দরবানের রুমা উপজেলায় তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন।
একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য ওয়েইবার ত্রিপুরাও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ঘটনার জন্য কুকিচীন পার্টিকে দুষছেন। তিনি বলছেন, নতুন সৃষ্ট ওই পাড়াতে মাত্র ৩টি পরিবারই বসবাস করত। এলাকাটি খুবই দুর্গম।এ বিষয়ে রাঙামাটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মাহমুদা বেগম বলছেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে দুর্গম এলাকা হওয়া সেখানে পৌঁছানো কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। তাই এখনো নিশ্চিত কিছু বলতে পারছিনা।’
কথা বলার জন্য বিলাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেনকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ‘বড়থলির চেয়ারম্যান বিষয়টি জানানোর পর বিলাইছড়ি থানাকে জানিয়েছি। এলাকাটি এতই দুর্গম যে সেখানে বিলাইছড়ি থেকে তিনদিন, পার্শ¦বর্তী রুমা উপজেলা থেকে যেতেও দুইদিন সময় লাগে। পুরো বিষয়টি রুমা জোনকে অবহিত করা হয়েছে, তারা বিষয়টি দেখছে।’
এদিকে ‘কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ’ নামের সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পেইজে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিয়েছে। সংগঠনটির ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপালনকারী হিসেবে দাবি করা কর্মকর্তা লে. কর্নেল সলোমন ওই বিবৃতিতে বলছেন ‘কেএনএফ-এর স্পেশ্যাল কমান্ডো ফোর্স হেড-হান্টার টিম সন্ত্রাসী জেএসএসর সশস্ত্র বাহিনী জেএলএ এর জাইজাম বেসমেন্ট ক্যাম্পে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। এতে জেএলএ বাহিনীর ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয় তবে আহত অবস্থায় ট্রেইনিসহ অন্যরা সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ সময় জেএলএ দের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে একজন শিশু আহত হলে কেএনএফ কমান্ডোরা পাড়াতেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা করে এবং প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র তার মায়ের কাছে রেখে যায়। সেই সময় গ্রামে থাকা ২ জন মহিলাকে জিজ্ঞাবাদের পর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে।’
তবে এই পেজ বা সংগঠনটি সম্পর্কে বিস্তারিত ও নিশ্চিত কোন তথ্য বা সূত্র জানতে পারেনি স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।