মাহতাব উদ্দিন :
ছোট্টখোকা তানিম তার আম্মুকে ডেকে বলল আম্মু, বিজয় ফুল কী? আম্মু তাসলিমা তাকে বিজয় ফুল সম্পর্কে ধারণা দেন এবং কীভাবে বানাতে হয় শিখিয়ে দেন। সে তার আম্মুর শেখানো মতে কয়েকটি শাপলা ফুল বানায়। বিশেষভাবে তৈরি শাপলা ফুলকেই নাকি বিজয় ফুল বলা হয়। তানিম তার আম্মুর কাছ থেকে তা জেনে নেয়। কাপড়, প্লাস্টিক শিট ইত্যাদি দিয়েও বিজয় ফুল তৈরি করা যায়। প্রতিটি ফুলে ৬টি করে পাপড়ি দেয় সে। প্রতি পাপড়ি দৈর্ঘে ৯ সেমি এবং প্রস্থে ৪ সেমি। সবুজ জমিনের ক্যানভাসে সাদারঙের পাপড়ি এবং মাঝখানে একটা কলি বসিয়ে দেয়। কাঁচি গাম স্কেল নরম পাইপ টিস্যু ইত্যাদি তানিম আম্মুর কাছ থেকে চেয়ে নেয়। এগুলো কাজে লাগিয়ে ফুল তৈরি করে। স্কুলে এসব জমা দিতে হবে তাকে।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে তার স্কুলে বিজয় ফুল প্রতিযোগিতা রয়েছে। প্রতিযোগিতায় সে অংশগ্রহণ করছে।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে তানিম। ওর একজন ম্যামকে প্রশ্ন করে, ম্যাম, বিজয় ফুল প্রতিযোগিতা আমরা কেন করি? ম্যাম তাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেন। ম্যাম বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নাগরিকেরা বিশেষ প্রতীক ধারণ করে থাকে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, বেলজিয়াম এসব রাষ্ট্রে প্রতিবছর ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত বীর শহীদদের স্মরণে ‘রিমেমব্রান্স ডে’ উদযাপন করে সেসব দেশের জনগণ। তারা ওইদিন পোশাকে লাল পপিফুল ধারণ করে। বাংলাদেশেও স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের স্মরণে বিজয় ফুলের প্রচলন হয়েছে।
তানিম ও তার সহপাঠীরা ম্যামকে বলে, তাহলে এখন থেকে আমরাও আমাদের স্কুলে প্রতিবছর বিজয় ফুল তৈরি করব। তানিমসহ সবাই ফুলের নিচে নিজের নাম, শ্রেণি ও রোল লিখে ওগুলো ম্যামের কাছে জমা দিয়ে বাড়ি চলে যায়।
১৬ ডিসেম্বর স্কুলের বিজয়োৎসবে গিয়ে তানিমের আব্বা-আম্মা নোটিশ বোর্ডে বিজয়ফুল প্রতিযোগিতার ফলাফল দেখেন। তানিম তাদের গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তানিম দারুণ একটা ফলাফল পেয়ে রীতিমতো নাচানাচি শুরু করে দেয়। তার আব্বা-আম্মা এবং স্যার-ম্যামরা তাকে অভিনন্দন জানান এবং মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন।
র্যালি, আলোচনা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিজয় ফুল প্রতিযোগিতা।