বর্ষা মৌসুমের আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে। জ্যৈষ্ঠের সামান্য বৃষ্টিতে এবং জোয়ারে নগরীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ নিয়ে উদ্বেগাকুল নগরবাসী। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নেওয়া প্রকল্পের অগ্রগতিও অনেকটা ধীর।
আমাদের পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ খালে মাটি ভরাট, উভয়পাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকাজÑএসবের ফলে পানি ঠিকমতো নিঃসরণ হচ্ছেনা আর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই জনগণের দুর্ভোগ চরমে উঠছে।
এসব খালের মুখে আবার স্লুইস গেট বসানো হবে বলে খালের মুখ বন্ধ রয়েছে, তাহলে বৃষ্টির পানি নেমে যাবে কিভাবে? চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী খালের বাঁধ কেটে দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন এক মতবিনিময় সভায় যাতে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে।
অন্যদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে বাঁধ ও খাল থেকে মাটি অপসারণ করে ফেলা হবে। যে সব খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য খালের মধ্যখানে মাটি ভরাট করা হয়েছে সে সব চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই অপসারণ করা হবে, বর্ষা শেষে নতুন করে কাজ শুরু হবে জানালেন প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী। যে সব খালের মুখে স্লুইচ গেট বসানোর কাজ চলছে সেখানে পাইপ দিয়ে বা বিকল্প ব্যবস্থায় পানি নামার ব্যবস্থা করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে খালগুলোর মুখ কেটে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ৩ বছরে কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেকের মতো কাজ হয়েছে।
কাজটি সম্পূর্ণভাবে শেষ হলে নগরবাসীর এর উপযোগিতা পাওয়ার কথা, তবে প্রতি বছর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কাজ দ্রুত শেষ হবেÑএই আশায় দিন গুনছেন নগরবাসী।
এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার কারণে নগরের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক, নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হয় সীমাহীন, পরিবেশ দূষণ ঘটে ভয়াবহ রকমের। জোয়ার একটু বেশি হলেও নগরের আগ্রাবাদ হালিশহরের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীর অধিবাসীদের এ ভোগান্তি পোহাতে হয় বছরের পর বছর। নগরীর খাল, নালাÑনর্দমা নিয়মিত ভরাট ও আবর্জনামুক্ত না করার কারণেও সামান্য বৃষ্টিতে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে ওঠে, দোকানপাট, ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। এ অবস্থা বছরের পর বছর চলে আসছে। নগরীর জলাবদ্ধতার অবসানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাজে সমন্বয় থাকাও প্রয়োজন। এই দুটি সংস্থার ওপরই নগরীর উন্নয়ন ও সেবার অধিকাংশ কাজই ন্যস্ত রয়েছে। আমরা চাই, যথাসম্ভব দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটির কাজ শেষ করে নগরবাসীকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করা হোক।
মতামত সম্পাদকীয়