বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় খুব দ্রুত পরিবর্তন আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাইস গ্যাস নিঃসরণের ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশেও বিগত ৫ দশকের বেশি সময়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মতো গড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে শহরগুলোতেও। আবহাওয়াবিদেরা জানাচ্ছেন, একসময় দেশের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বজ্রপাত হলেও এখন সারাদেশেই তা ছড়িয়ে পড়েছে। বজ্রপাতের সময়েও এসেছে বিপুল পরিবর্তন। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে বজ্রপাতের ঝুঁকিবৃদ্ধির নিবিড় যোগসূত্র আছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি। এই এলাকায় আবার বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি বাংলাদেশেই। দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি মাত্রায় দেখা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে এখন বজ্রপাতেই বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটছে এদেশে। এটা খুবই পরিতাপের বিষয়। একই সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাতের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ বজ্রপাতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এজন্য মানুষের প্রাণহানির সংখ্যাও এখানে দিন দিন বেড়ে চলেছে। বছরে দেশে গড়ে তিন শর ওপর মানুষের মৃত্যু ঘটছে বজ্রপাতে। এরপরও মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভার রয়েছে। আবার সরকারও এ বজ্রপাতকে দুর্যোগ বলে ঘোষণা করলেও এ বিষয়টির মোকাবিলায় দৃশ্যমান উদ্যোগের তেমন আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছে, এমন বলা যাচ্ছে না। মূলত গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় বজ্রপাতের ঘটনাও বৃদ্ধি পায়।
গবেষকদের মতে, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
আবার আমাদের দেশে কালববৈশাখীর কারণে এপ্রিল থেকে জুন মাসে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, তালগাছসহ উঁচু বৃক্ষের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং জলাভূমি ভরাটের বকারণে বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বড় বড় গাছ বজ্র প্রতিরোধকরূপে কাজ করে কিন্তু বসতবাড়ি নির্মাণ ও কৃষিকাজের জন্য গাছ কেটে ফেলায় বজ্রপাতে প্রাণহানি আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে গ্রামাঞ্চলে কৃষকেরা ধান কাটায় ব্যস্ত থাকে। এ সময়ে বজ্রপাতে তাদের দুর্ঘটনায় পড়তে দেখা যায়।
একটি জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বজ্রপাতে বাংলাদেশে ২ হাজার ৭৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। আবার এ বছরের এপ্রিল-মে মাস থেকে বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মে মাসে এটি আরও বেশি। গত ১৮ মে একদিনেই সারাদেশে ১৭জন বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এ অবস্থায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সমাজ হিতৈষীদের তৎপরতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে। কেননা সচেতনতা সৃষ্টি বিপদের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
মতামত সম্পাদকীয়