গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এবং সামনের বর্ষা মৌসুমে মহানগরী ও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলাসমূহে পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছে প্রশাসন ও পরিবেশবিদগণ। চট্টগ্রাম মহানগরী ও সন্নিহিত জেলাসমূহে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা মানুষ আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। আমাদের বান্দরবান ও টেকনাফ প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বান্দরবানের লক্ষাধিক এবং টেকনাফের দুই লক্ষ মানুষ পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি, সামনের বর্ষা মৌসুম এবং অতীতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির বিপর্যয়কর দিনগুলির কথা বিবেচনায় নিয়ে এসব জেলার প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে প্রচেষ্টা নেওয়া। গত ৫ জুন টেকনাফের হোয়াইকং ইউনিয়নে চাকমারকুল এলাকায় বসতঘর মাটি চাপা পড়ে এক মহিলা নিহত হন।
বনবিভাগের তথ্যমতে, ২০১০ সালে ১৫ জুন টেকনাফসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসে ৫৮জনের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে টেকনাফে মারা যায় ৩৪ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত ১৫ বছরে পাহাড় ধসে মৃত্যু দুই শতাধিক, রাঙামাটিতে কয়েক বছর আগে পাহাড়ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশি বিদেশি গণমাধ্যমে এসব ঘটনা মানবিক বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও সন্নিহিত জেলার পাহাড় কর্তন ও বন উজাড়, বৃক্ষনিধন অব্যাহতভাবে চলেছে এর ফলে পাহাড়গুলি ন্যাড়া হয়েছে। মাটি নরম হয়েছে, টানা বর্ষণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে। সামনের বর্ষায় পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ সাময়িকীতে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষকদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও উষ্ণ আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বাড়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় এবারের বর্ষা বিপর্যয়কর হতে পারে। বর্ষায় অতিবৃষ্টি, অপ্রত্যাশিত ও চরম বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট পারফরমেন্সের (সিডিএমপি) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শুধু বর্ষণের কারণে নয়, ভূমিকম্পেও পাহাড় ধসে ব্যাপক জানমাল ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকদফা ভূমিকম্প অশনি বার্তা বহন করছে। চট্টগ্রাম এবং সন্নিহিত জেলাসমূহে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছেÑএটি বিশেষজ্ঞদের মতামত। সরকার ও প্রশাসনের উচিত এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাসগুলি সতর্ক বিবেচনায় নেওয়া।
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিরোধী কর্মকা-ের প্রতিবিধানে নানা আইন থাকলেও এর কার্যকর প্রয়োগ এবং এসবের হোতাদের শাস্তি পাওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম। প্রশাসনের চোখের সামনেই মহানগরী ও সন্নিহিত জেলার পাহাড় কর্তন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসত নির্মাণ ঘটে চলেছে। কেউ কোনো বাধা দিচ্ছে না, বর্ষা এলেই লোকজন সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়, আবার এসব মানুষ সহায়সম্বল ফেলে যেতে চায় না। এ জন্য প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান।
পাহাড় কর্তন ও পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করে দিতে হবে, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিরোধী এসব অপকর্মের হোতাদের শাস্তি দিতে হবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে যারা পাহাড়ের পাদদেশে ও বনাঞ্চলে বসতি স্থাপন করছে তাদের স্থানীয়ভাবে যথাযথ পুনর্বাসন ও জীবন জীবিকার সংস্থান করে দিতে হবে যাতে নগরে ও পার্বত্য জেলায় অভিবাসন বন্ধ করা যায়। প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সময় থাকতেই ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া যায়।
মতামত সম্পাদকীয়