নগর নিয়ে শঙ্কা মেয়রের

দখল-দূষণ

সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে

 ওয়াসার পানি নিয়ে ক্ষোভ কাউন্সিলরদের

প্রত্যেক ওয়ার্ডে পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা

 স্মার্ট নগরী করতে চসিক ও জেলা প্রশাসন কাজ করবে

হীনস্বার্থে দখল-দূষণে ভুগতে থাকা চট্টগ্রামের নাগরিকদের জীবনমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
গতকাল রোববার চসিকের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ২৭তম সাধারণ সভায় মেয়র এ সংকট সমাধানে বিভিন্ন সেবা সংস্থা আর নাগরিকদের মধ্যে সমন্বয় আর পারস্পরিক সহযোগিতা চান।
সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট চট্টগ্রামের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। এর আগে নগরীর বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সংকট ও নিম্নমান নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন চসিকের কাউন্সিলরবৃন্দ।
জবাবে ওয়াসাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের গৃহীত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
এ সময় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, বন-পাহাড়-নদী-সমুদ্র নিয়ে প্রকৃতির রাণী চট্টগ্রাম। তবে আমরাই সুন্দর চট্টগ্রামকে হীনস্বার্থে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছি। আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়ন নিয়ে ভাবছি কিন্তু, নাগরিকদের জীবনমান বিশেষ করে অবসর বিনোদন আর পরিবেশের ভারসাম্যের কথা ভাবছি না।
‘ওয়াসার লবণাক্ত পানি সরবরাহের ফলে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সবাই ওয়াসার সামর্থ্যরে ঘাটতির কথা বলছে কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ সময়ের অনাবৃষ্টি, কাপ্তাই লেকে পানি শুকিয়ে গিয়ে শ্যাওলার জন্ম আর কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে নোনা পানির প্রবেশের কারণেই যে ওয়াসার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে তা নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। পরিবেশ সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছেন। কিন্তু, কেবল সরকারি উদ্যোগ নয় সাধারণ মানুষেরও কিন্তু চট্টগ্রামকে পরিত্যক্ত নগরী হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে কাজ করতে হবে।’
সংকট সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে মেয়র বলেন, আমরা কেবল অভিযোগ করব, শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ তাদের জন্য খেলার মাঠ রাখব না তাহলেতো কোন সমাধান হলো না। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। যাতে শিশুরা খেলতে পারে, বয়স্করা অবসরে হাঁটতে পারে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও রেলওয়েকে তাদের ভূমিতে খেলার মাঠ ও পার্ক করার জন্য আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি।
‘মেয়রের পদে বসেই আমি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আগ্রাবাদ ঢেবা ও পাহাড়তলি জোড় ঢেবার সৌন্দর্যবর্ধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দিতে বলি, তবে রেল কর্তৃপক্ষ সহায়তা না করায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আমি বলেছি, ভূমির মালিকানা সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে না, শুধু ভূমি দিলে করপোরেশনের অর্থে পার্ক-মাঠ গড়ে দেব। রানীর দীঘিকে দখলের হাত থেকে বাঁচানো গেলেও, এখনো ষড়যন্ত্র চলছে।’
কেনো কোনো ক্ষেত্রে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে চট্টগ্রামের ক্ষতি করা হয়েছে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘বিপ্লব উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক স্থানকে দোকান বসিয়ে এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ইজারাদাররা সেখানে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করলেও, বছরে মাত্র লাখ টাকার জন্য এ মূল্যবান স্থান ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিয়া হয়েছে। আমি ওখানের ব্যবসায়ীদের বলেছি, ব্যবসা করতে হলে বিপ্লব উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের জাদুঘর গড়ে তুলতে হবে। আর দায়িত্ব নেয়ার পর সৌন্দর্যবর্ধনের নামে করপোরেশনের ভূমি ইজারা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
প্লাস্টিকদূষণ রোধে কাজ চলছে জানিয়ে মেয়র বলেন, পলিথিন, প্লাস্টিকের কারণে কর্ণফুলী নদী মৃতু্যুর মুখে। কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে না। তাই, আগামী তিন মাসের মধ্যে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর নদী অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদের পাশাপাশি পুনর্দখল রোধেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নিজস্ব অর্থায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র বলেন, নাগরিক সেবা প্রদানকে গতিশীল রাখতে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয় দিয়ে আন্দরকিল্লায় পুরাতন ভবনের স্থলে ২১ তলা ভবন নির্মাণের কাজ মে মাসেই শুরু হবে।
সভায় মেয়র নগরীর নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে হকারদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা দোকান উচ্ছেদ, বহদ্দারহাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ, নগরীর ফøাইওভারের নিচে এবং অন্যান্য উপযুক্ত স্থানে সড়কসমূহে পে পার্কিং চালুকরণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করতে মেয়রের পরিবেশ নিয়ে যে উদ্বেগ তা নিরসনে কাজ করা হবে। পলিথিনবিরোধী অভিযানে বিক্রেতার চেয়ে উৎপাদক পর্যায়ে জরিমানায় বেশি মনোযোগ দেয়া হবে। কারণ, পলিথিনের সরবরাহ না থাকলে মানুষ পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজাতে চসিক এবং জেলা প্রশাসন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। একদিকে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালাবে, অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া ভূমিতে পার্ক, খেলার মাঠ আর রাস্তা বানাবে সিটি করপোরেশন। জলাধার রক্ষা, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ফুটপাথ উদ্ধারসহ চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করতে দুটি সংস্থা যৌথভাবে কাজ করবে।
সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি