মধ্যরাতে ফ্লাইওভারে যানজট, নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধসে দুই স্পটে চার জনের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক »
প্রবল বৃষ্টি হয়েছে শুক্রবার দিবাগত রাতে। আর এতে সিডিএ এভিনিউ রোডের ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড় থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত পানি জমে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার দিয়ে বহদ্দারহাট যেতে গিয়ে ষোলশহর দুই নম্বর গেটের পর আটকা পড়েন সংবাদকর্মী হেলাল সিকদার।
হেলাল সিকদারের মতো আরো অনেকে মধ্যরাতে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েন ফ্লাইওভারের উপরে। সিডিএ এভিনিউ রোডের মুরাদপুর এন মোহাম্মদের সামনে থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত অংশে কোমর সমান পানি থাকায় কোনো গাড়ি ফ্লাইওভার থেকে নামতে পারেনি। ফলে দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। ফ্লাইওভারের নিচে পানি ও উপরে যানজটে যখন দিশেহারা মানুষ আর তখন আকবরশাহ এলাকায় দুই স্থানে পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। অপরদিকে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
জলাবদ্ধতা কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা একমাত্র দুর্ভোগে পড়া মানুষই বলতে পারে। স্বাভাবিকভাবে নালা দিয়ে পানি যাওয়ার কথা। কিন্তু জাকির হোসেন রোড বাই লাইনে একটি নালার প্রায় ১০ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
জাকির হোসেন রোডের মহিলা কলেজের মোড়ের যে খালটি দিয়ে পানি নেমে এসেছে তা দিয়ে প্রবল বেগে পানি নেমে আসার সময় প্রায় ১০ ফুট উঁচু আকারে প্রবাহিত হয়েছে এবং নালার পাশের সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে পাশের ঘরগুলোর দেয়ালও ভেঙ্গে দিয়েছে। পুরো ঘরে প্রবেশ করেছে পানি। ওই ঘরের বসবাসকারী ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে প্রবল বেগে পানি নেমে এসেছে। এতে দেয়াল ভেঙে পানি ঘরে প্রবেশ করে।’
শুধু এই এলাকা নয়, নগরীর ওয়ার্লেস মোড় ও ইস্পাহানী সি গেট এলাকায় বৃষ্টিতে সাধারণত পানি না জমলেও শুক্রবার রাতের প্রবল বর্ষণে কোমর সমান পানি জমেছে এবং উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় রাত ১১টার দিকে। আর প্রতিনিয়ত যেসব এলাকায় পানি জমে সেগুলোতে পানি তীব্রতা বাড়িয়েছে। বেড়েছে জলাবদ্ধতার সময়ও। চকবাজার ফুলতলা এলাকায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত রাস্তায় জমা ছিল পানি।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এতে আরো বেশি জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি থামার দুই ঘণ্টার মধ্যে রাত তিনটার দিকে পানি নেমে গেছে। তারপরও কিছু নিঁচু এলাকায় পানি জমা রয়েছে। সেসব এলাকার নালাগুলো আবর্জনায় ভরাট থাকায় পানি নামতে পারছে না।’
তিনি আরো বলেন, জোয়ারের পানি থাকায় আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ নদী উপকূলবর্তী এলাকায় পানি জমেছে।
পাহাড়ধসে মারা গেল চার জন
নগরীর আকবরশাহ থানাধীন ফিরোজশাহ এক নম্বর ঝিল এলাকায় প্রায় দুইশ ফুট উঁচু পাহাড় ধসে নিচে ঘরের উপর পড়ে রাত দেড়টার দিকে। এসসময় ঘরে থাকা পাঁচ জনের মধ্যে দুই বোনের মৃত্যু হয়। বাকি তিনজন জীবিত উদ্ধার হয়। পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি নির্মাণ করায় এই মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে ফয়’স লেক এলাকায় লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাশে বরিশাল কলোনিতে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা বিশাল এলাকায় একটি পাহাড় ধসে ঘরের উপর পড়ে। সেই ঘরে থাকা দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ের যে স্থানে ঘরগুলো নির্মিত হয়েছে সেখানে এধরনের দুর্ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। বালি মাটির এসব পাহাড় কেটে পাহাড়ের ঢালে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। টানা বর্ষণে পাহাড়ের মাটিগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় তা উপর থেকে নিচের দিকে ধসে পড়ে এবং মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বৃষ্টি কতো হলো?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর ২৯ মিলিমিটার এবং আমবাগান আবহাওয়া অফিস ১৭৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গত শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে। এসময়ে আমবাগান আবহাওয়া অফিসে থাকা বৃষ্টিমাপক যন্ত্রটি ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। তারপর থেকে কমতে থাকে বৃষ্টির তীব্রতা। এদিকে বৃষ্টির পূর্বাভাস প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টি মঙ্গলবার পর্যন্ত থাকতে পারে। এছাড়া ভারী বর্ষণের সতর্কতাও রয়েছে।’
উল্লেখ্য, বৃষ্টি হলেই পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর এতে প্রতিবছর মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।