বিবিসি বাংলা »
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করলো নিউইয়র্কের এক আদালত। তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক নথিপত্র গোপন করে সাবেক এক পর্ণ তারকাকে অর্থ দেয়ার বিষয়ে আনা চৌত্রিশটি অভিযোগেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
তবে আদালত আগামী এগারই জুলাই এ মামলায় সাজা ঘোষণা করবে। এর চারদিন পরেই রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন দেয়ার কথা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতের রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং জানিয়েছেন শুক্রবার ম্যানহাটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন তিনি।
তবে এ রায়ের প্রভাব কী হবে, বিশেষ করে ট্রাম্পের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
আমেরিকার সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্টদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিস এক বিবৃতিতে বলেছে নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের পদক্ষেপগুলোতে কোন পরিবর্তন আসছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোন সাবেক বা বর্তমান প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
ম্যানহাটনের ১২ বিচারকের প্যানেল বৃহস্পতিবার সর্বসম্মত ভাবে তাদের রায় ঘোষণা করেছেন। ছয় সপ্তাহের বিচার ও দুই সপ্তাহের যুক্তিতর্ক শেষে রায়টি ঘোষণা করা হয়।
আদালত কক্ষে প্রবেশের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমকে মামলাটি ‘অপমান জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন ‘সবাই এর বিরুদ্ধে’।
‘আপিল করতে যাচ্ছি’
বিচারকে অন্যায্য বললো ট্রাম্পের লিগ্যাল টিমডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ আইনজীবীদের একজন ফক্স নিউজকে বলেছেন যে সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনি দল আপিলের সব বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে।
“এই মামলার সবগুলো দিকই আপিলের উপযুক্ত,” বলেছেন উইল স্ক্যার্ফ। “যতটা দ্রুত পারি আমরা আপিল করতে যাচ্ছি”।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি দলের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য টড ব্লাঞ্চে ফক্স নিউজে বলেছেন তার মক্কেল ন্যায় বিচার পাননি।
“এক বছর ধরেই আমরা বলে আসছি যে ম্যানহাটনে আমরা ন্যায় বিচার পাচ্ছি না,” বলেছেন তিনি।
তার অভিযোগ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন ট্রাম্পকে ধ্বংস করার লাইফ মিশনে নেমেছেন। “এখানে কিছু লোক ছিলো যাদের বিচারে সাক্ষী করা উচিত হয়নি,” বলেছেন তিনি।
রায়ে বিস্মিত নন কোহেন
রায়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন বলেছেন যে তিনি স্বস্তিবোধ করছেন কিন্তু তিনি বিস্মিত হননি। “দিন শেষে সত্যের জয় হলো,” বলেছেন তিনি।
“এটা জবাবদিহিতা, এইটা সেটি যা আমেরিকার এখন দরকার”।
এর আগে মাইকেল কোহেনই একমাত্র ব্যক্তি যিনি তথ্য গোপনের জন্য পর্ণ তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের জন্য সাজা প্রাপ্ত ছিলেন।
আদালতে ট্রাম্পের আইনি দল তাকে জেরা করেছে। অ্যাটর্নি টড ব্লাঞ্চে তাকে ‘সর্বকালের সেরা মিথ্যাবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জবাবে আজ কোহেন ব্লাঞ্চেকে ‘ সর্বকালের সবচেয়ে বোকা আইনজীবী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
‘বিচার প্রশাসনের জয়’
ম্যানহাটনের সাবেক প্রসিকিউটর ডানকান লেভিন বলেছেন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস মামলাটি প্রমাণ করতে পেরেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থ দিয়ে তা মিথ্যা তথ্যে ঢেকে দিতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
তিনি বলেন তার ক্ষমতা দিয়ে বিচার প্রশাসনকে হেয় করার জন্য সব কিছু করেছেন। “এবং তিনি বিচার পেয়েছেন যা মৌলিকভাবে ন্যায্য”।
“প্রসিকিউশনের জন্য এটা বড় একটি জয়,” বলেছেন তিনি।
ডেমোক্র্যাটদের প্রশংসা
ডেমোক্র্যাট দলীয় আইন প্রণেতাদের অনেকে সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের প্রশংসা করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তারা বলেছেন ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’।
“আজ সাধারণ আমেরিকান জনগণ একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে পেয়েছেন যিনি কয়েক ডজন অপরাধ করেছে। বিচার প্রলম্বিত করতে তার সব চেষ্টা সত্ত্বেও ন্যায় বিচার হয়েছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,” লিখেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাডাম স্কিফ।
অ্যাডাম স্কিফ ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ঘটনাটি তদন্ত করা হাউজ সিলেক্ট কমিটিতে ছিলেন।
সাউথ ক্যারোলাইনার জিম ক্লিবার্ন লিখেছেন ‘বিচারকরা বলেছেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে”।
ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি প্রমিলা জয়পাল বলেছেন “এটি আমেরিকার জবাবদিহিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত”।
‘লজ্জার দিন’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীরা রায়ের সমালোচনা করে বলছেন যে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কংগ্রেস সদস্য মারজরি টেইলন গ্রিনি এক্স -এ লিখেছেন “শ্যাম ট্রায়াল”।
ম্যাট গায়েৎয লিখেছেন: “এ রায় দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারের দুর্নীতিময় ফল। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে আছি”।
স্পিকার মাইক জনসনও সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রতি তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। “আজ আমেরিকার ইতিহাসে একটি লজ্জার দিন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং তিনি জিতবেন”।