ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির ও গাজার ফিলিস্তিন এলাকায় গত ১ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের ক্রমাগত বিমান হামলায় ১৮৯ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৫৫জন শিশু, আহত সহ¯্রাধিক।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের সময় এই ভয়াবহ হামলা এক নির্মম ট্রাজেডি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দম্ভভরে বলেছেন, প্রয়োজনে হামলা আরও চলবে। ফিলিস্তিনি ভূ-খ-ে ইসরায়েলের হামলা নতুন নয়, তারা বছরের পর বছর একটি জনপদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে আসছে তবে এবার ইসরায়েল অনেকটা যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো অবস্থা তৈরি করেছে। তারা কেবল বেসামরিক লোকজনের ঘর-বাড়িতে হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দফতর এবং সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস ভবনও গুড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়া অব্যাহত রেখেছে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হামাস, এতে বেশ কিছু ইসরাইলি হতাহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শনিবার বলেন, হামাসের হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার ইসরাইলের আছে। তাঁর এই বক্তব্যের পর দুই পক্ষকে শান্ত থাকার তাঁর আহ্বান হাস্যকর শোনাচ্ছে। জো বাইডেন ফিলিস্তিন প্রশ্নে কার্যত তাঁর পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিকেই অনুসরণ করছেন। জো বাইডেনের এই ভূমিকা নিয়ে লিবারেল ও মধ্যপন্থি ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তাঁর কাছ থেকে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ন্যায্য ভূমিকা ও মানবাধিকার নীতি স্পষ্ট করার আহ্বান জানান।
নিরীহ মানুষজন হতাহত ও শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন পোপ ফ্রান্সিসও। এদিকে আগামী রোববার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বসবে বলে জানানো হয়েছে। ই ইউ পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা মঙ্গলবার জরুরি আলোচনায় মিলিত হবেন বলে কথা রয়েছে। ৫৭টি মুসলিম দেশের সংস্থা (ওআইসির) নির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠকে ফিলিস্তিনে চলমান নৃশংসতার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের এই নৃশংস হামলায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিস্পৃহ ভূমিকা বিশ্বের শান্তি ও বিবেকবান মানুষকে হতাশ করেছে। নিরাপত্তা পরিষদ তাদের আগের প্রস্তাব ও দুই রাষ্ট্র সম্পর্কিত নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছেনা যা খুবই দুঃখজনক। এই কভিড মহামারির কালে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এই নৃশংস হামলা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উচিত ইসরায়েলের এই যুদ্ধবাজ নীতির প্রতি ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানানো। আত্মরক্ষার অজুহাত তুলে ইসরায়েল একের পর এক ফিলিস্তিন ভূÑখ- দখল করছে, বোমা মেরে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছেÑএটি হতে পারেনা। ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ প্রস্তাব এবং অসলো চুক্তি অনুযায়ী দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অবস্থানই ফিলিস্তিন তথা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের পথ।
এটি দুর্ভাগ্যজনক যে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলি ফিলিস্তিন প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ কোন ভূমিকা নিতে পারছেনা এমনকি ফিলিস্তিনিরাও দুই শিবিরে বিভক্ত। এই বিভক্তি এবং মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কারণ হয়েছে। প্রতিদিনই ফিলিস্তিনে রক্ত ঝরছে ইসরাইলিদের আক্রমণে। ইসরাইলি দখলদারি ও সম্প্রসারণবাদী নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা থাকা চাই, নতুবা ইসরাইলের আগ্রাসী ভূমিকাকে নিবৃত্ত করা যাবে না। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়ী সমস্যার একমাত্র পথ। এই স্বাধীনতার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের ঐক্যও অপরিহার্য।
মতামত সম্পাদকীয়