রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ল ২ হাজার ঘর
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লেগে ২ হাজারের বেশি বসতঘর পুড়ে গেছে। রোববার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-১৫ ব্লকের একটি বসতঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে ক্যাম্পের সহস্রাধিক বসতঘর ও দোকানপাট পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দউল্লাহ দাবি করেন, ১১, ৯, ১০ নম্বর ক্যাম্পের ৮টি ব্লকের কমপক্ষে ২ হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এ ক্যাম্পগুলোর কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষকে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে’।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ইনচার্জ এমদাদুল হক বলেন, ‘টেকনাফ, কক্সবাজারসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন ১০টি ইউনিটে ভাগ হয়ে উদ্ধার তৎপরতা ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পুলিশ ও স্থানীয়রা এ সময় সহযোগিতা করেন।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, এফডিএমএন ক্যাম্প-১০ ও ক্যাম্প-১১ এর মাঝামাঝি বিভিন্ন ব্লকে আগুন লাগে। তিন ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ১২ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ আরফাত (৩১) জানান, ‘আমার পার্শ্ববর্তী ব্লকে আগুন লেগেছিলো, পরিবার পরিজন নিয়ে ঘর থেকে কোন রকমে বেরিয়ে এসেছি। কোন কিছুই বের করতে পারিনি। চোখের সামনেই আমার ঘরটি পুড়ে যায়।
১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যুবক মোহাম্মদ করিম (২৫) বলেন, ‘আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়লাম, পরিবার নিয়ে চলে যাচ্ছি আত্মীয়ের বাসায়। আমার কিছু অবশিষ্ট নেই।’
ক্যাম্পের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। একসময় আগুন স্থানীয়দের ঘরবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিলো।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলেন, এখন ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ শামছু-দ্দোজা নয়ন বলেন, বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি, ই, ডি ব্লক সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। নয়, ১০ এবং ১২ নম্বর ব্লকের কিছু পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এক রোহিঙ্গা শরণার্থী যুবককে আটক করা হয়েছে। পুলিশ এরই মধ্যে তদন্তে নেমেছে।
এর আগে, ২০২১ সালে ২২ মার্চ একই ক্যাম্পসহ পার্শ্ববর্তী তিনটি ক্যাম্পে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় আগুনে দশ হাজারেরও বেশি বসতঘর পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সদস্য গৃহহারা হয়েছিল। এছাড়া দগ্ধ হয়ে দুই শিশুসহ ১৫ রোহিঙ্গা মারাও গিয়েছিলো।