একান্ত সাক্ষাৎকারে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী
নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্নের জন্য চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় নিশ্চিত করতে হবে
জলাবদ্ধতার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই প্রকল্পের অনুমোদন পেলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ২০১৮ সালের এপ্রিলে কাজ শুরুর পর নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এখন প্রস্তুতি চলছে প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজটি কেন শেষ করা যায়নি, এতোবছর কী কাজ হয়েছে, আগামীতেও নির্ধারিত সময়ে তা শেষ করা যাবে কি-না এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলীর সঙ্গে। কথা বলেছেন সুপ্রভাতের প্রধান প্রতিবেদক ভূঁইয়া নজরুল।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : ২০১৮ সালের এপ্রিলে মেগাপ্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেন কাজ শেষ হয়নি?
লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী : সময়ের ব্যবধান যদিও চার বছর। কিন্তু বাস্তবে আমরা কাজ করেছি দুই বছর। এই দুই বছরের মধ্যে আমরা প্রকল্পের ৫১ শতাংশ ভৌত কাজ শেষ করেছি। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে ১১০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩৬টি প্রাইমারি খাল, ৩০২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি খালে কাজ করা। এসব খালে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং ৫টি খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণের কাজ রয়েছে। নগরীর যে ২১টি পয়েন্টে পানি জমে তা চিহ্নিত করে কানেকটিং ড্রেন নির্মাণের মাধ্যমে পানি নেমে যাওয়ার কাজ করা হয়েছে। তবে তা পুরোদমে শেষ করা যায়নি।
সুপ্রভাত : তাহলে প্রথম দুই বছর কী কাজ হয়েছে?
শাহ্ আলী : যেকোনো প্রকল্পে ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং প্ল্যানিং হওয়ার পর প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় এবং পরবর্তীতে কাজ শুরু হয়। সিডিএ এই কাজগুলো করে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপর সেনাবাহিনীর পরামর্শক নিয়োগ করে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। আর তা করতেই দুই বছর চলে যায়। এসময়ের মধ্যে শুধু খালগুলো পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে। আর এতেই বিলম্ব হয়েছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। তবে আগামীতে কাজ দ্রুত হবে।
সুপ্রভাত : যেহেতু জলাবদ্ধতা প্রকল্পটি বৃহৎ, তাই চট্টগ্রাম শহরের পানি নিষ্কাশনের সম্পূর্ণ ম্যাপিং করা হয়েছে কি-না?
শাহ্ আলী : মেগাপ্রকল্পের আওতায় আমরা কী কী কাজ করবো তা নির্ধারণ করা আছে। আমাদের কাজের বাইরে যা রয়েছে এর সবই করবে সিটি কর্পোরেশন। তারপরও নগরীতে পানি জমে এমন ২১টি এলাকা চিহ্নিত করে ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক তৈরি করছি। নগরীর ১৬০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার শুধু আমাদের প্রকল্পের আওতায় রয়েছে এবং বাকি ১৩০০ কিলোমিটার ড্রেন সিটি কর্পোরেশন মেইনটেনেন্স করার কথা। এখন সিটি কর্পোরেশন যদি তাদের কাজ না করে তাহলে রাস্তা থেকে ড্রেনের মাধ্যম হয়ে পানি খালে আসবে না। আমাদের কাজ তো প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি খালে। তারপরও পানি নেমে যেতে সহায়তা করতে আমরা ১১০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করছি।
তবে পুরো শহরের পানি নিষ্কাশনের পূর্ণাঙ্গ ম্যাপিং থাকা প্রয়োজন। এতে পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং অনেক সহায়ক হয়ে থাকে। আমরা আমাদের প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো ম্যাপিং করছি।
সুপ্রভাত : প্রকল্পের আওতায় এপর্যন্ত ১৭৭১ কোটি টাকা খরচের পরও অল্প বৃষ্টিতে নগরীতে পানি জমছে কেন?
শাহ্ আলী : মূলত পানি নামতে না পারা ও জোয়ারের কারণে পানি জমছে। পানি নামানোর জন্য আমরা খালের বাঁধগুলো কেটে দিয়েছি। আর জোয়ারের পানির জন্য স্লুইচ গেট নির্মাণের কাজ শেষ। আগামী সেপ্টেম্বরে স্লুইচ গেট এলে তা বসিয়ে দেওয়া হবে। জোয়ারের পানি মূলত মহেশখাল, চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল ও নোয়া খালের মাধ্যমে নগরীতে বেশি প্রবেশ করে। এজন্য আমাদের প্রকল্পের আওতায় ৫টি এবং সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় ৩৫টি স্লুইচ গেট রয়েছে। সব স্লুইচ গেট না বসানো পর্যন্ত জোয়ারের পানি নগরীতে প্রবেশ বন্ধ হবে না।
সুপ্রভাত : এখন সংশোধিত ডিপিপির আওতায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবনা যাচ্ছে। এতে সময় ও বাজেট উভয় বাড়বে। তারপরও কি এই প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করা যাবে বলে মনে করছেন?
শাহ্ আলী : সংশোধিত ডিপিপির আওতায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হতে পারে। সেই হিসেবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় পাওয়া যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে যদি চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করা হয় এবং সিডিএ যদি ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি সম্পন্ন করে দিতে পারে তাহলে আমরা আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে দিতে পারবো। তবে সিডিএ যদি ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে খালের উভয় পাশে সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করা যাবে না। এতে প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত থাকবে। আর সেনাবাহিনী অহেতুক এই প্রকল্প দীর্ঘস্থায়ী করবে না, দুই বছরের মধ্যে যতটুকু সম্পন্ন হবে ততটুকু কাজ সিডিএ’কে বুঝিয়ে দিয়ে প্রকল্প থেকে বিদায় নেবে সেনাবাহিনী।
সুপ্রভাত : তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের অর্থ ছাড় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা…
শাহ্ আলী : অবশ্যই। চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করা না গেলে প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া কঠিন। আগামী অর্থবছরে প্রয়োজন দুই হাজার কোটি টাকার বেশি, কিন্তু জানতে পারলাম আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৩২৫ কোটি টাকা। শুধু হিজরা খালের উভয় পাশে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৪১৮ কোটি টাকা। যদি পুরো বছরে ৩২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে কি প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া সম্ভব?